ইসলামি আইনে ধর্ষণের শাস্তি কি
ইসলামী আইনে ধর্ষণের শাস্তি কি? এই প্রশ্ন আমাদের অনেকের মনেই ঘুরপাক খায়।
মাধ্যমে এই প্রশ্নটির উত্তর বিস্তার ভাবে বলার চেষ্টা করব। সম্পূর্ণভাবে
কুরআন-হাদিস ও বিশিষ্ট আলেমদের বক্তব্য থেকে নেওয়া কিছু কথা তুলে ধরা হবে।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। জীবনের প্রয়োজনে যেকোনো বিষয়ে সমাধান
নেওয়ার জন্য কুরআন ও হাদিসের নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে আমাদের
দেশে ধর্ষণের হার দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাই এই বিষয়ে ইসলাম কি বলে তা জানা
আমাদের সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
ইসলামি আইনে ধর্ষণ
ইসলামী আইনে কোন অপরাধীকে সরাসরি শাস্তির কথা বলা হয়নি বরং
সময়-কাল,ব্যক্তি,স্থান ভেদে অপরাধীর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
একইভাবে ধর্ষকের শাস্তিও বিভিন্নভাবে উল্লেখ আছে। যেমন ব্যাভিচারের
শাস্তি আলাদা এবং ধর্ষণের শাস্তি আলাদা।
বিবাহ সম্পর্ক ছাড়া পরস্পর যৌন মিলন করা ইসলামে একটি জঘন্যতম অপরাধ। এই
বিষয়ে শাস্তি নির্ধারণ করা আছে। তবে যদি একপক্ষের সম্মতি না থাকে তাহলে
তা ধর্ষণ বলে বিবেচিত হবে। অর্থাৎ জোরপূর্বক ভাবে যদি কেউ যৌন মিলন করে
তাহলে সেটা ধর্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়। ধর্ষণ অথবা ব্যভিচার উভয়ের জন্য
রয়েছে কঠোরতর শান্তি। চলুন জেনে নিই।
ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি
শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার সুস্পষ্ট হারাম ও বড় ধরনের অপরাধ। যেমন কোরআন
মাজিদের সুরা বনি ইসরাইলের ৩২ নম্বার আয়াতে বলা হয়েছে: ‘আর ব্যভিচারের
কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ মুফাসসির দের
মতে ব্যভিচার করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে এমন সকল কাজ এরিয়ে চলা উচিত। অর্থাৎ,
যেসব বিষয় ব্যাভিচারে উদ্বুদ্ধ করে এবং ভুমিকা রাখে সে সকল কাজ করা হারাম।
ইসলামে ব্যাক্তি ভেদে ব্যাভিচারের ২ভাবে শান্তির কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।
তা হলো:
- ব্যাভিচারী পুরুষ অথবা ব্যাভিচারীনী নারী যদি বিবাহিত হয় তাহলে তাঁকে প্রকাশ্যে ততক্ষণ পর্যন্ত পাথর দিয়ে আঘাত করতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়।
- অন্যদিকে ব্যাভিচারী পুরুষ অথবা ব্যাভিচারীনী নারী যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাঁকে প্রকাশ্যে একশোটি বেত্রাঘাত করতে হবে। বলে রাখা ভালো স্বজনপ্রীতি দেখানোর জন্য বা অন্য কোন কারণে কম শক্তি প্রয়োগ করা যাবে না।
এছাড়াও হাদিস শরিফে ব্যাভিচারী পুরুষ অথবা ব্যাভিচারীনী নারী যদি
অবিবাহিত হয় তাহলে তাঁকে প্রকাশ্যে একশোটি বেত্রাঘাত করার পাশাপাশি এক
বছরের জন্য দেশান্তর করার কথা উল্লেখ পাওয়া যায়।
তবে যেসব শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে, তা কেবল রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের
অনুমোদনপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রয়োগ করবে, সামাজিক কোনো সালিশি
বৈঠকের কেউ নয়। এর জন্য রাষ্ট্রের পৃথক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন
হয়। যা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত।
ইসলামে ধর্ষণ প্রমাণের নীতিমালা
ব্যাভিচার অথবা ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এমন কথা প্রমাণ করার জন্য ইসলামী দুটি
বিষয়ের মধ্যে কোন একটি জরুরী বলে গণ্য করা হয়েছে।
- চারজন সাক্ষী: ঘটনা কালীন যদি চারজন ব্যক্তি নিজ চোখে দেখেছে বলে একই সাক্ষী প্রদান করে তাহলে প্রমাণ হয়ে যায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
- ধর্ষণের স্বীকারোক্তি: নিজেই স্বীকার করে তাহলেও প্রমাণিত হয়ে যায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
তবে ৪জন সাক্ষী না পাওয়া গেলে বর্তমানে আধুনিক DNA টেস্ট, CCTV ফুটেজ,
ক্যামেরা বা মোবাইলে ধারণকৃত ফুটেজ, ধর্ষিতার বক্তব্যসহ অন্যান্য যেকোনো
মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনা জানার পর ধর্ষণকে আটক করে তার স্বীকারোক্তি নেওয়া
গুরুত্বপূর্ণ।
ইসলামি আইনে ধর্ষণের শাস্তি
ইসলামিক স্কলারদের মতে ধর্ষণের সময় দুটি অপরাধ সংঘটিত হয়। প্রথমত
ব্যভিচার দ্বিতীয়ত বলপ্রয়োগ বা নির্যাতন। তাই এই দুটি অপরাধের জন্য
আলাদা আলাদাভাবে শাস্তি প্রদান করতে হবে।
ব্যাভিচারের জন্য ব্যাভিচারের শাস্তি অর্থাৎ পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত
করা অথবা একশোটি বেত্রাঘাত করে এক বছরের জন্য দেশান্তর করা। এবং
বলপ্রয়োগ করে নির্যাতন করার জন্য 'মুহারাবা'র শাস্তি প্রদান করতে হবে।
মুহারাবা হলো রাস্তা অথবা অন্য যেকোনো জায়গায় অস্ত্র দেখিয়ে অথবা
অস্ত্র ছাড়া ভয় ভীতি প্রদর্শন করে সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া, হত্যা করা,
নির্যাতন করা অথবা উভয়টি করা।
আরো পড়ূনঃ
ইসলামে বিয়ের সঠিক বয়স
মুহারাবার শান্তি সম্পর্কে পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেন
‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের সঙ্গে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি
করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে, তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলিতে
চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে অথবা
দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হলো- তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্চনা আর
পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি। ’ (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৩৩)
এই আয়াতের দ্বারা বোঝানো হয়েছে অপরাধকারি পোস্টটা করলে মৃত্যুদণ্ডের
মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা, সম্পদ ছিনিয়ে নিলে পেছন দিক থেকে হাত কেটে
নেওয়, সম্পদ ছিনিয়ে হত্যা করলে শুলিতে চরিয়ে হত্যা করা আর এর চেয়ে লঘু
অপরাধ করলে দেশান্তরের শাস্তি দিতে হবে।
ধর্ষণের শাস্তি কে দেবে
ইসলামিক আইন অনুযায়ী কিছু কিছু অপরাধের শাস্তি সামাজিকভাবে বৈঠকের মাধ্যমে
প্রদান করা যায়। এবং কিছু কিছু অপরাধের শাস্তি শুধুমাত্র রাষ্ট্রের
নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই প্রদান করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম
একটি অপরাধ হলো ধর্ষণ বা ব্যভিচার। ধর্ষণের শাস্তি দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের
পৃথক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হয়। যা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত।
যেসব শাস্তির কথা আলোচিত হয়েছে সেগুলো কেবলমাত্র রাষ্ট্রের অনুমোদন প্রাপ্ত
সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রয়োগ করবে সামাজিক কোনো সালিশি বৈঠকে বা ব্যক্তি
পর্যায়ের কোন ব্যক্তি ধর্ষকের বা ব্যভিচারের শাস্তি প্রয়োগ করতে পারবে
না। তবে রাষ্ট্রের সেই সংশ্লিষ্ট দপ্তর অবশ্যই ন্যায়ের উপর
প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। এবং ইসলামী আইন অনুসারে শাস্তি প্রদান নিশ্চিত করতে
হবে
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুল ত্রুতি থাকলে কমেন্টে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য বিনিত অনুরোধ করছি। একই সাথে আপনার দৃষ্টিতে ধর্ষণকের কি ধরনের শাস্তি হওয়া উচিৎ তা কমেন্টে জানিয়ে দিন।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url