দরুদে ইব্রাহিমের ফজিলত ।। দুরুদ শরিফ বাংলা উচ্চারণ

দুরুদে ইব্রাহিমের ফজিলত সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই ধারণা নেই। আবার অনেকেই এই দুরুদ শরীফ পড়তে পারি না বা মুখস্থ নেই। দুরুদে ইব্রাহিমের অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে।
দুরুদে-ইব্রাহিমের-ফজিলত
আজকের আর্টিকেলে দরুদে ইব্রাহিমের আরবীর পাশাপাশি বাংলা উচ্চারণ, অর্থ এবং এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। এছাড়াও কখন কখন ইব্রাহিম পড়তে হয় সেই বিষয়েও কথা বলার চেষ্টা করব।

পেজ সূচিপত্রঃ

দরুদে ইব্রাহিমের ফজিলত

ইসলামিক সংবিধান অনুযায়ী দুরুদে ইব্রাহিম পড়ার অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজেই পবিত্র কুরআন মাজিদের ভেতর দরুদ পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও একাধিক হাদীস দ্বারা দরুদে ইব্রাহিম পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত প্রমানিত।

দরুদ পাঠ করা মাধ্যমে রহমত ও বরকত লাভ করা সম্ভব। সালাতের মধ্যে দুরুদে ইব্রাহিম পাঠ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তাই আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে এই দরুদ পাঠ করি। সালাত ছাড়াও অন্যান্য যেকোনো সময় পাঠে রয়েছে মুস্তাহাব সওয়াব।

দুরুদ শরিফ আরবি, বাংলা উচ্চারণ

দুরুদে ইব্রাহিম এর ফজিলত পাওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদেরকে শুদ্ধভাবে দুরুদ শরীফ পড়তে হবে। সহি ভাবে দুরুদ শরীফ পড়ার জন্য নিচে দুরুদ শরীফ আরবী উচ্চারণ দেওয়া হল। যারা আরবি পড়তে পারেন না তাদের জন্য বাংলা উচ্চারণও দেওয়া থাকবে। এখান থেকে আপনারা সঠিক উচ্চারণ জেনে নিতে পারেন।
আরবী উচ্চারণ:
اَللّهُمَّ صَلِّ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ - كَمَا صَلَّيْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ - وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ - إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ - اَللّهُمَّ بَارِكْ عَلى مُحَمَّدٍ وَّعَلى آلِ مُحَمَّدٍ - كَمَا بَارَكْتَ عَلى إِبْرَاهِيْمَ - وَعَلى آلِ إِبْرَاهِيْمَ - إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدُ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ-লি মুহাম্মাদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীম ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা বা-রাকতা আলা ইব্রাহীম ওয়া আলা আ-লি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। [১]

দুরুদ শরিফের বাংলা অর্থ

হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। হে আল্লাহ! তুমি হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ কর, যেমন তুমি হজরত ইব্রাহিম ও তার বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছ। নিশ্চয় তুমি প্রশংসিত গৌরবান্বিত। 

নামাজে কখন দুরুদ শরিফ পড়তে হয়

নামাজের ভেতরে দরুদ শরীফ পড়ার বিধান সম্পর্কে ইসলামী শরীয়তের বিধানে বলা আছে নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পাঠ করার পর দুরুদ শরীফ পড়তে হয়। নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ পাঠ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। 
কেউ যদি নামাজের শেষ বৈঠকে দরুদ শরীফ না পড়ে তবে তার নামাজ হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি জেনে বুঝে সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ আদায় না করে ব দরুদ শরীফ না পড়াকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলে তাহলে সে গুনাগার হবে। [২]

কুরআন ও হাদিসের আলকে দরুদ পাঠের গুরুত্ব

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা দরুদ পাঠের নির্দেশনা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা বলেন "নিশ্চয় আল্লাহ নবীর উপর রহমত অবতীর্ণ করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দোয়া করেন।  সুতরাং হে মুমিনগণ! তোমরাও তার প্রতি দরুদ পড়ো এবং অধিক পরিমাণে সালাম পাঠাও। " [৩]
দরুদ পাঠ বলতে শুধুমাত্র দ্রুত ইব্রাহিমের কথা বলা হয়নি বরং নবীর প্রতি দুরুদ পাঠ এবং সামাম পাঠানোর জন্য আমরা যেকোনো দুরুদ পড়তে পারি। যেমন নবীর নাম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরুদ পাঠ করতে হয়। এ সম্পর্কে হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে।

"আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) মিম্বারে আরোহণ করে বলেন, আমীন আমীন, আমীন। তাঁকে বলা হলো, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তো কখনও এরূপ করেননি।
তিনি বলেন, জিবরাল (আ.) বলেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে জীবিত পেলো, অথচ তারা তার বেহেশতে প্রবেশের কারণ হলো না, সে অপমানিত হোক। আমি বললাম, আমীন। অতঃপর তিনি বলেন, যে ব্যক্তি রমযান মাস পেলো, অথচ তার গুনাহ মাফ হলো না সে অপমানিত হোক। আমি বললাম, আমীন। তিনি পুনরায় বলেন, যার সামনে আপনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হলো, অথচ সে আপনার প্রতি দুরূদ পড়লো না সে অপমানিত হোক। আমি বললাম, আমীন।" [৪]

দরুদ পড়ার ফজিলত

রাসূলের প্রতি দরুদ পাঠকারীদের জন্য ফেরেশতা দোয়া করে রহমত নাযিল হয় এছাড়াও বিপদ আপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও আরো বিভিন্ন ফজিলত রয়েছে। রাসুল সাঃ এর উপর দরুদ পাঠ করা সম্পর্কে হাদিসে বর্ণনা করেন 
"রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমরা যখন মুওয়াযযিনকে আযান দিতে শুন, তখন সে যা বলে তোমরা তাই বল। অতঃপর আমার উপর দুরূদ পাঠ কর। কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তা’আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার রহমত বর্ষণ করেন।" [৫]
এছাড়াও আরো একটি হাদিসে বলা আছে
" কিয়ামতের দিন সেই ব্যক্তি সব লোকের চাইতে আমার বেশী নিকটবর্তী হবে, যে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আমার উপর দরূদ পড়বে" [৬]

কোন সময় দুরুদ পড়া যাবে না



টীকা ও রেফারেন্স

১)  সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১২৯১
২) রাদ্দুল মুহতার, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ৪৮৩
৩) সুরা আহজাব, আয়াত : ৫৬
৪) আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস: ৬৫০
৫) মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৩৮৪
৬) তিরমিযী শরিফ, হাদিস: ৪৮৪

শেষ কথা

প্রিয় পাঠক বন্ধুগণ আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে দুরুদে ইব্রাহিম এর ফজিলত সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। এছাড়া অত দরুদে ইব্রাহিমের বাংলা, আরবি উচ্চারণ এবং অর্থসহ জেনে নিতে পারবেন আজকের আর্টিকেল থেকে।

রাসুলের প্রতি দুরুদ পড়ার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে যে সকল কুরআন কুরআনের আয়াত ও হাদিসের অংশ থেকে কথা বলা হয়েছে সবগুলোই টিকা ও রেফারেন্স অংশে দেওয়া হয়েছে। এর পরেও যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানিয়ে দেবেন। আর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করুন বন্ধু ওপরিবারকে উৎসাহিত করুন। ধন্যবাদ
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কোনো কমেন্ট করা হয় নি
কমেন্ট করতে ক্লিক করুন

শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।

comment url