ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম জানা থাকলে আপনি নিজে নিজেই আপনার অথবা পরিচিত
যে কারো ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে নিতে পারবেন।
আজকের আর্টিকেলে দেখাবো কিভাবে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা চেঞ্জ করবেন।
আজকের দেখানো নিয়য় স্টেপ বাই স্টেপ ফলো করে কাজ করলে কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই
আপনার প্রয়োজনমতো ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ
ভোটার এলাকা পরিবর্তন
আপনারা যারা এনআইডি কার্ডের এলাকা পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন অথচ কোথায় গিয়ে
করতে হয় সেটি জানেন না অথবা অনলাইনে করা যায় কিনা সেই বিষয়ে ধারণা নেই
তাদের জন্য আজকের আর্টিকেলটি। বাড়ি থেকে অনেক দূরে পড়াশোনা করার জন্য
কিংবা অন্য যেকোনো কারণে গিয়ে দীর্ঘদিন থাকার ফলে সেই জায়গাতেই এনআইডি
কার্ড তৈরি করা হয়েছে। এখন বাড়িতে ফিরে আসছি তাই আমার স্থায়ী ঠিকানায়
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে চাচ্ছি। অথবা আগে পরিবার থাকতাম এখন সেই জায়গা
থেকে শিফট করে অন্য জায়গায় চলে এসেছি ফলে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার
প্রয়োজন হচ্ছে। কিংবা অন্য যে কোন কারনে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার
প্রয়োজন হয়।
আরো পড়ুনঃ বসে উঠলেই বমি হয় কেন?
বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পূর্ণ করা গেলেও অনলাইনে ভোটার আইডি
কার্ডের স্থানান্তর অর্থাৎ ভোটার এলাকা পরিবর্তন করা যায় না। ভোটার আইডি
কার্ডের স্থানান্তর করার জন্য স্থানীয় নির্বাচন কমিশন অফিসে সরাসরি
উপস্থিত হতে হয়। তবে এক্ষেত্রে কোন টাকা পয়সার খরচ হবে। ভোটার আইডি কার্ড
এর ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য কিছু ডকুমেন্ট নিয়ে নির্দিষ্ট অফিসে এগিয়ে
জমা দেওয়ার কিছুদিন পর তত্ত্ব ভেরিফিকেশন কমপ্লিট করা হবে এবং ঠিকানা
পরিবর্তন করে দেওয়া হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার জন্য কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। আপনার
এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করে আপনি জেনে নিতে পারবেন আপনার
এলাকায় কোন কোন কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। তবে সাধারণত যে সকল কাগজপত্র
প্রয়োজন হয় সেগুলো হলো:
- পূর্বের NID কার্ডের ফটোকপি: বর্তমানে আপনার যেই আইডি কার্ড রয়েছে সে আইডি কার্ডের একটি ফটোকপি করে নিবেন এবং মেইন আইডি কার্ডটিও সাথে রাখবেন।
- জন্ম নিবন্ধন কার্ড: যিনি আবেদন করবেন তার ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন কার্ডের ফটোকপি।
- নাগরিকত্ব সনদ: ইউনিয়ন পরিষদ / কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে তুলে নিতে পারবেন।
- প্রত্যয়ন পত্র: ইউনিয়ন পরিষদ / কাউন্সিলর অফিসে গিয়ে তুলে নিতে পারবেন।
- পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ড: পিতা এবং মাতা উভয়েরই ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- বিলের কাগজ: যে এলাকায় পরিবর্তন করবেন সেখানকার একটি বিদ্যুৎ বিল, পানি বিল অথবা গ্যাস বিল যেকোনো একটির ফটোকপি দিলেই হবে।
- বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্সের ফটোকপি: প্রতিটি এলাকায় ইউনিয়ন কর্তৃক হোল্ডিং ট্যাক্স নেওয়ার সময় একটি রশিদ দেয়া থাকে সেই রশিদের ফটোকপি প্রয়োজন হবে।
- বিয়ের কাবিননামা: আপনি যদি বিবাহিত হয়ে থাকেন তাহলে বিয়ের কাবিননামা প্রয়োজন হতে পারে তাই ফটোকপি করে নিয়ে যেতে ভুলবেন না।
- স্বামী/স্ত্রীর ভোটার আইডি কার্ড: অনেক সময় বিবাহিত ছেলেদের থেকে তার স্ত্রীর এবং মেয়েদের থেকে তার স্বামীর ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়ে থাকে। তাই সঙ্গে রাখুন। তবে না চাইলে দেওয়ার দরকার নেই।
- ১৩ নম্বর ফরম: ১৩ নম্বর ফরমটি এখান থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করুন অথবা নির্বাচন অফিসের আশেপাশের যেকোনো কম্পিউটার দোকানে পেয়ে যাবেন। ফরম-১৩ সংগ্রহ করে নিচের দেখানোর নিয়ম অনুসারে আপনার সকল তথ্য দিয়ে নির্ভুলভাবে পূরণ করুন।
বিঃদ্রঃ উপরের বলা সমস্ত কাগজ A4 সাইজের কাগজে ফটোকপি করে নিয়ে যেতে
হবে।
স্থানান্তর ফরম (ফরম-১৩) পূরণ করার নিয়ম
ডাউনলোড করার পর দুই পৃষ্ঠার একটি ফরম পেয়ে যাবেন। প্রথম পৃষ্ঠায় ১
থেকে ৭ এবং দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ৮ নম্বর থাকিবে।
১। আপনার সম্পূর্ণ নাম দিবেন।
২। আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নিচে থাকা ১০ অথবা ১৭ ডিজিট নাম্বারটি
দিবেন
৩। আপনার আইডি কার্ডে যে তারিখ দেওয়া আছে সে জন্ম তারিখটি দিবেন।
৪। বর্তমানে যে স্থানে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা দেওয়া আছে সেই
স্থান অনুযায়ী ভোটার নাম্বার, এলাকার নাম, উপজেলা, জেলা ইত্যাদি দেবেন।
ভোটার এলাকা নাম্বার না জানা থাকলে মেম্বার/কাউন্সিলর কে জিজ্ঞেস করবেন।
৫। আপনি যে স্থানে আপনার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করতে
চাচ্ছেন সেই এলাকার নাম, উপজেলা, জেলা ইত্যাদি দেবেন। এবং মোবাইল
নাম্বারের জায়গায় আপনার সচল মোবাইল নাম্বার দিয়ে দিবেন।
৬। যে স্থানে স্থানান্তর করতে চাচ্ছেন সেই স্থানে কত দিন যাবত আছেন সেটি
দেবেন। (১ বছরের ওপরে দিলে ভালো হয়)
৭। পারিবারিক কারণে/ চাকরি স্থানান্তরের কারণে/ অথবা যে কোন কারণ দিতে
পারেন।
৮। আবেদনকারী স্বাক্ষরের জায়গায় আপনার সংক্ষিপ্ত নামটি লিখে
দিবেন।
আবেদনকারী কে সনাক্তকারী স্বাক্ষরের জায়গায় আপনার এলাকার
মেম্বারের/চেয়ারম্যান/কাউন্সিলর/মেয়রকে বলে স্বাক্ষর দিয়ে নিবেন।
এর নিচে আর কোন কিছু লিখার প্রয়োজন নেই। আপনাদের সুবিধার্থে একটি
ডেমো ফরম পূরণ করে দেখিয়ে দেওয়া হলো।
সমস্ত কাগজপত্র জমা দেওয়া
সমস্ত কাগজপত্র A4 সাইজ এ ফটোকপি করে এবং ফ্রম ১৩ নির্ভুলভাবে পূরণ করে
রবি থেকে বৃহস্পতি যেকোনো দিনে আপনার এলাকার উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা
দিতে হবে। এবং অবশ্যই আবেদনকারী কে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। আপনার
তথ্য যাচাই করার জন্য উপরে বলা কাগজপত্র ব্যতীত অন্যান্য যেকোনো কাগজপত্র
চাওয়া হতে পারে।
কর্মরত অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী সমস্ত কাগজ পাতি A4 সাইজের কাগজে
ফটোকপি করে পুনরায় জমা করুন। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন এ সকল কাগজপত্র জমা
দেওয়ার জন্য নির্বাচন অফিসে কোন প্রকার টাকা পয়সা লেনদেন করা যাবে না।
নতুন আইডি কার্ড কোথায় পাবেন
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার পর নতুন আইডি কার্ড কোথায়
পাবেন? অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে তাহলে অফিসে গিয়েই ভোটার আইডি
কার্ড নিতে হবে এমনটা নয়। বরং আপনি অনলাইন থেকে নতুন ভোটার আইডি কার্ড
ডাউনলোড করে নিতে পারেন। উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার এলাকা
পরিবর্তন করার জন্য যে সকল কাগজপত্র জমা দিয়েছেন সেগুলো দিয়ে কর্মরত
অফিসার আপনার হয়ে আবেদন করবেন। আবেদন করার সময় আপনার দেওয়া মোবাইল
নাম্বারে একটি SMS পাঠানো হবে।
আরো পড়ুনঃ মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
এরপর কিছুদিনের মধ্যে আবারো আবেদনের কনফারমেশন মেসেজ পাঠানো হবে। আবেদনের
কনফারমেশন মেসেজ পাওয়ার পর আপনাকে সেই লিংকে গিয়ে রি-ইস্যু করতে হবে।
রি-ইস্যু করতে কমবেশি ৫০০ টাকার মতো পরিশোধ করতে হবে। রি-ইস্যু করার
টাকা পরিশোধ করার সাথে সাথেই আপনি ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করে নিতে
পারবেন। তবে এই বিষয়টি আপনি নিজে না বুঝতে পারলে আশেপাশের যে কোন
কম্পিউটার দোকানে গিয়ে বললেই আপনার হয়ে সমস্ত কাজ করে দেবে এবং আপনাকে
নতুন ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে দিবে।
স্মার্ট কার্ড কোথায় পাবো
ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার পূর্বে যদি আপনার স্মার্টকার্ড থেকে থাকে তাহলে
আর স্মার্ট কার্ড পাবেন না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিক কে শুধুমাত্র দেওয়া
হয়। তাই তাই ঠিকানাই ভোটার আইডি কার্ড করার পরে স্মার্ট কার্ডের জন্য
আবেদন করা উচিৎ। আপনি যদি স্মার্ট কার্ড না পেয়ে থাকেন তাহলে আপনি
নির্দ্বিধায় ভোটার এলাকা পরিবর্তন করতে পারেন এবং নির্বাচন অফিসের
যোগাযোগ করে স্মার্ট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন।
শেষ কথা
আজকের আজকের এর মাধ্যমে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত
অর্জন করার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে এই নিয়ম অনুসরণ করে যে কেউ তার ভোটার
এলাকা পরিবর্তন করতে পারে। আমি নিজের এই নিয়মগুলো অনুসরণ করি ভোটার এলাকা
পরিবর্তন করেছি। এবং ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই আজকের এই আজকের আর্টিকেলেটি
লিখা হয়েছে। এরপরেও যদি কোন জায়গায় কোন ভুলত্রুটি হয়ে থাকে তাহলে
ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন এবং কমেন্টে ধরিয়ে দিতে ভুলবেন না।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url