অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসা
অল্প পুজিতে লাভজনক ব্যবসা বলতে সে সকল ব্যবসাকে বোঝায় যেই ব্যবসা যে কেউ চাইলেই
করতে পারে। আপনি যদি ব্যবসা করতে চান কিন্তু শুরু করার জন্য তেমন কোন টাকা না
থাকে তাহলে ভয় পাবেন না। কারণ একেবারেই অল্প পুঁজিতে ব্যাবসা শুরু করা সম্ভব।
আজকের দিনে এসেও খুবই অল্প টাকা দিয়ে যে সকল ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। সেগুলো
নিয়ে আজকে আলোচনা করব। তাই যারা অল্প টাকার ভেতরে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন
তাদের জন্য উপকারে আসবে।
পেজ সূচিপত্রঃ
অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া
আজকে বেশ কয়েকটি বিজনেস আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করা হবে। আপনারা যারা
শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদের জন্য ব্যবসার আইডিয়া শেয়ার করা হবে। এমন কিছু
আইডিয়া নিয়ে কথা বলতে চলেছি যেগুলো অন্যান্য সকল কাজ করার পাশাপাশি ফ্রি
টাইমে কিছুটা সময় দিয়ে কাজ করলে এ সকল ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। এমনও
কয়েকটি ব্যবসার কথা আলোচনা করব যেগুলো ব্যবসার বাস্তব অভিজ্ঞতা আমার
নিজেরই রয়েছে। ব্যবসার লাভ ক্ষতি সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন
একটি আর্টিকেল এর মাধ্যমেই।
আরো পড়ুনঃ গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
আপনার যদি ইচ্ছা, মনোবল ও চেষ্টা থাকে তাহলে অল্প পুঁজি থেকে শুরু করেও
ভালো পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব। আজকের আর্টিকেলে যে সকল ব্যবসা নিয়ে কথা বলব
সেগুলো হলো:
- গবাদিপশুর জন্য ঘাস চাষ
- পুকুরে মাছ চাষ করা
- বয়লার মুরগি পালন
- সমন্বিত চাষাবাদ
- একুরিয়ামে মাছ চাষ
- কোয়েল পাখি পালন
গবাদিপশুর জন্য ঘাস চাষ
বর্তমানে প্রতিটি গ্রামে প্রায় সবাই গবাদি পশু বিশেষ করে গরু ও ছাগল
পালন করে। দিন দিন গবাদিপশু পালনের চাহিদা বেশি হওয়ায় গরুর বা ছাগলের
খাবারের জন্য গ্রামগঞ্জে মাঠে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘাস পাওয়া যায় না। তাই
যারা গবাদি পশু পালন করে তারা বেশিরভাগই ঘাস কিনে খাওয়ায়।মাঠে যদি
আপনার জমি থাকে তাহলে আপনি আপনার সেই জমিতে অন্যান্য আমাদের করার
পরিবর্তে গবাদি পশুর জন্য ঘাস চাষ করতে পারেন।
বর্তমানে ঘাসের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি হওয়ার ফলে এর দামও দিন দিন বৃদ্ধি
পাচ্ছে। তাই অন্যান্য আবাদের তুলনায় ঘাস চাষ বেশি লাভজনক হবে। ব্যক্তিগত
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি বর্তমানে প্রতি বিঘা ঘাসের মূল্য ২০,০০০টাকা। এবং
প্রতি বছর পাঁচ থেকে ছয় বার ঘাস বিক্রি করা যায়। সেই হিসেবে বছরে এক
লাখ টাকার মত ঘাস বিক্রি হয়। আর ঘাস চাষে তেমন কোন পরিশ্রমেরও
প্রয়োজন হয় না।
একবার বীজ ঘাস গোপন করলেই ৫ থেকে ৬ বার ঘাস পাওয়া যায়। প্রতিবার ঘাস
কেটে নেওয়ার পর পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং সার দিয়ে দিলেই পরবর্তী দুই
থেকে আড়াই মাসের ভেতর আবারো ঘাস কাটার উপযুক্ত হয়ে যায়। ঘাস কেটে
নেয়ার পর জমিতে থাকা কাটা অংশ থেকে পুনরায় ঘাস জন্মায় তবে চার থেকে
পাঁচ বার ঘাস জন্মানোর পর ঘাসের কাটা অংশ উপড়ে ফেলে নতুনভাবে ঘাস
লাগানোর প্রয়োজন হয় এতে করে ঘাসের ফলন ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পায়।
পুকুরে মাছ চাষ করা
আপনার বাড়ির আশেপাশে যদি পরিত্যক্ত কোন পুকুর থাকে তাহলে সেই পরিত্যাক্ত
পুকুরকেই আপনি আপনার ব্যবসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
পরিত্যক্ত পুকুরের আশেপাশের সমস্ত জঙ্গল পরিষ্কার করে নিয়ে যদি গভীরতা কম
থাকে তাহলে কিছুটা পরিমাণ গভীরতা বৃদ্ধি করে নিতে পারেন। এবার সেই পুকুরে
তুমি অথবা মীমের পাতা দিয়ে পুকুরের পানি খেয়ে বিশুদ্ধ করে তুলুন এবং আপনি
সেই পুকুর মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত করে তুলুন।
মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত হয়ে গেলে সেই পুকুরের মাছ চাষ করে লাভবান হতে
পারবেন এতে করে পারিবারিক অসচ্ছলতা দূর হবে এবং পারিবারিক আমিষের চাহিদাও
পূরণ হবে। তবে অবশ্যই পুকুরের গভীরতা অনুযায়ী কি ধরনের মাছ চাষ করা লাভমান
হবে সেই বিষয়ে ভালোভাবে জেনে নিয়ে তারপর পুকুরের মাছ চাষ করা উচিত।
বয়লার মুরগি পালন
বয়লার মুরগি পালনের জন্য কিছুটা পরিমাণ বেশি খরচ হতে পারে তবে এতে লাভের
পরিমাণও বেশি হয়। আপনার বাড়ি আশেপাশে কোন ফাঁকা জায়গা নির্বাচন করে
সেখানে বয়লার মুরগি পালন করতে পারেন। প্রথম অবস্থায় থাকার জায়গা খাবার
পর পানির পর সহ অন্যান্য এক্সট্রা খরচ হতে পারে তবে পরবর্তী থেকে এগুলো খরচ
না হওয়ার কারণে লাভ দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবে বয়লার মুরগি পালনের
ক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেকে দায়িত্ববান হিসেবে খামারে সময় দিতে হবে এবং বাড়ি
থেকে কিছুটা দূরে বয়লার মুরগির খামার দেওয়া উচিত।
সমন্বিত চাষাবাদ
সমন্বিত চাষাবাদ বলতে বোঝায় একই সাথে একাধিক বিষয়ে চাষ করা। যেমন
পরিত্যক্ত পুকুরে যদি আপনি মাছ চাষ করেন তাহলে সেই পুকুরে উপরে মাচা তৈরি
করে সেখানে বয়লার মুরগি পালন করতে পারেন। এতে করে বয়লার মুরগি পালন
করার জন্য এক্সট্রা জায়গার প্রয়োজন হবে না। একই সাথে বয়লার মুরগির
বিষ্ঠা মাছের খাদ্য হিসেবে কাজ করবে এতে মাছের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
তোমাকে আলাদাভাবে খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হবে না বা কম প্রয়োজন হবে।
আরো পড়ুনঃ আমাশয় রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
এছাড়াও বর্ষার সময় বিভিন্ন ফসলের জমিতে পানি জমে যায় এ সকল ফসলের
জমিতে চিংড়ি মাছ চাষ করা যেতে পারে বিশেষ করে ধানের জমিতে চিংড়ি মাছ
চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব। ধানে থাকা বিভিন্ন কীটপতঙ্গ খেয়ে চিংড়ি
মাছ বড় হয় আলাদাভাবে কোন প্রকার খাবার দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
অন্যদিকে কীটপতঙ্গ খেয়ে ফেলার ফলে ধানের জমিতে কোন প্রকার কীটনাশক
দেওয়া লাগে না। তাই সমন্বিত চাষাবাদকে সকলে লাভবান হিসেবেই দেখে।
কোয়েল পাখি পালন
আপনার যদি ঘাস চাষ করার জন্য জমি না থাকে, মাছ চাষ করার জন্য পরিত্যক্ত
পুকুর না থাকে, এমনকি বয়লারের খামার দেওয়ার জন্য তেমন কোন জায়গা না থাকে
তাহলে আপনার জন্য বিকল্প হতে পারে কোয়েল পাখি পালন। কারণ কোয়েল পাখি পালন
করতে বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। আপনার বাড়ির বারান্দার একপাশে অথবা
বাড়ির ছাদেও কোয়েল পাখি পালন করা যায়।
কোয়েল পাখির দাম খুবই কম হওয়ায় অল্প টাকাতে আপনি কোয়েল পাখি পালন শুরু
করতে পারেন। কোয়েল পাখির বাচ্চা ক্রয় করে সেগুলো বড় করে বিক্রি করতে
পারবেন এছাড়াও আপনি চাইলে কোয়েল পাখি পালন করে কোয়েল পাখি থেকে প্রাপ্ত
ডিম বিক্রি করতে পারবেন। কোয়েল পাখির ডিম খুবই পুষ্টিকর তাই এগুলো বিক্রির
পাশাপাশি পরিবারের খাদ্য তালিকায় যোগ করে পুষ্টি চাহিদা মেটাতে পারবেন।
একুরিয়ামে মাছ চাষ
অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে আরও একটি বিকল্প পদ্ধতির হলো একুরিয়ামে
মাছ চাষ করা। একুরিয়ামে মাছ চাষ করে উনি লাভজনক ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
একুরিয়ামে চাষ করার জন্য বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় তবে ব্যবসার
জন্য চাষ করতে চাইলে অবশ্যই সে সকল মাছ চাষ করতে হবে যে মাছগুলো খুব ঘন ঘন
বাচ্চা দেয়। আপনি জোড়ায় জোড়ায় মাছ কিনে সেগুলো এখনই আমি রেখে দেবেন
এবং নিয়মিত খাবার দেবেন তাহলে শুধু মধ্যে আপনার অ্যাকোরিয়ামের মাছ বাচ্চা
দেবে এবং সেই বাচ্চাগুলো বিক্রি করে আপনি লাভবান হতে পারবেন।
অনলাইনে রিসেলিং ব্যাবসা
ব্যাবসা করার জন্য আপনার যদি কোন প্রকার পুঁজি না থাকে তাহলে আপনি অনলাইনে
রিসেলিনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। একটি করে বড় পরিসরে ব্যবসা
শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজি তৈরিতে সহায়ক হবে। অনলাইনে রেসলিং
ব্যবসা করার মত বিভিন্ন সাইট পেয়ে যাবেন। তবে সম্পূর্ণ ফ্রিতে রিসেলিং
শুরু করতে চাইলে
সপবেইজ
প্ল্যাটফর্ম বেস্ট হবে বলে আমি মনে করি।
তবে আপনি চাইলে অন্যান্য যে কোন প্লাটফর্মে রিসেলিং করতে পারেন। রিফিলিং
করার জন্য অবশ্যই ফেসবুক মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে হবে। ফেসবুক মার্কেটিং
সম্পর্কে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের
ফেসবুক মার্কেটিং
সম্পর্কিত পোস্টটি পডতে পারেন অথবা ইউটিউবে অনেক টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন সেই টিউটোরিয়াল দেখেও ফেসবুক মার্কেটপ্লেস সম্পর্কে ধারনা নিতে পারেন।
লেখকের শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে দেখানো অল্প পুঁজিতে লাভজনক ব্যবসার মধ্যে বেশ কয়েকটি
ব্যবসা আমি নিজেও করি। এবং বাকি ব্যবসার জন্য আমার পরিচিতদের মধ্যে অনেকেই
করছে। তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিয়ে এবং আমার
ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতা থেকেই লিখা হয়েছে আজকের আর্টিকেলটি।
পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই, যেকোনো ব্যবসা করতে চাইলে অবশ্যই সেগুলো লাভ
ক্ষতি সকল দিক বিবেচনা করে করা উচিত কারণ ব্যবসায় যেমন লাভ আছে তেমন
ক্ষতিও আছে। শুধু লাভের আশা করি ব্যবসা করলে কোনদিনও সফলতা অর্জন করা সম্ভব
না। কোন ভুলত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url