কলা খাওয়ার উপকারিতা কি
কলা একটি উপকারী ফল। ভিটামিন পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফাইবার সহ কলাতে রয়েছে
অসংখ্য পুষ্টিগুণ। কলাতে এই ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকায় আমাদের পশু দিনের
খাদ্য তালিকায় এই ফলটি যুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা কলা খাওয়ার উপকারিতা এবং কলাতে থাকা বিভিন্ন
ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানব একই সাথে কলা খেলে আমাদের শরীরের কি ধরনের উপকার
হয় সে সকল উপকার সমূহ বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পেজ সূচিপত্রঃ
কলার পরিচয় ও পুষ্টিগুণ
কলা কে বলা হয় সুপারফুড যা অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ একটি ফল।
কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ ভিটামিন সি পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম হাইবার
প্রাকৃতিক শর্করা সহ আরো অন্যান্য অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান। এছাড়াও আমরা
প্রতিটি কলা থেকে ১০০ থেকে ১৫০ গ্যালারি পায়। যা দৈনিক শক্তির চাহিদা পূরণ
করতে অত্যন্ত কার্যকরী ফল। পাশাপাশি নিয়মিত কলা খেলে ম্যাগনেসিয়াম এর ঘাটতি
পূরণ হবে। তাই অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি বাড়তি খাবার হিসেবে আমরা প্রতিদিন
কলা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
কলা আমাদের শরীরের হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। অনেক সময় হজম শক্তি কম থাকার কারণে
পেটের গ্যাস বদহজম কোষ্ঠকাঠিন্যসহ অন্য বিভিন্ন ধরনের রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু
যদি আমরা নিয়মিত কলা খেতে পারি তাহলে কলাতে থাকা ডায়েটারি ফাইবার। আমাদের
হজম জনিত সকল রোগ থেকে মুক্তি দিবে। অর্থাৎ কলাতে উচ্চমাত্রার ডায়েটারি
ফাইবার থাকে যা হজম প্রক্রিয়া সক্রিয় রাখে। নিয়মিত কলা খেলে ঘাট
ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য বজায় থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
হার্টের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
হার্ড আমাদের শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। সমাজের দিন দিন হার্ট
এটাক ও হার্ট স্ট্রোকের পরিমাণ বেড়ে চলেছে গবেষণায় প্রমাণিত যে সকল
ব্যক্তির নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্টকের ঝুঁকি
কম রয়েছে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে না থাকলেই মূলত হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের
ঘটনা ঘটে। আর যেহেতু কলাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে
তাই নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং হার্ট স্টক
ও অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ানি এছাড়াও কলাতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীর
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খুবই কার্যকরী।
শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি
সকল কিছুর মূল শক্তি শরীরে শক্তি না থাকলে কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। তাই
প্রতিদিনের খাবার সাথে আমাদের এমন কিছু খাবার এড করা উচিত যাতে করে আমাদের
শারীরিক শক্তি সচল থাকে এবং বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও বিভিন্ন দুর্বলতা দূর করার
জন্য এমন খাবার বেছে নেওয়া উচিত যেগুলোতে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও
দুর্বলতা কমায়। এমন ফলের তালিকা করতে চাইলে মোটা দাগে কলার নামটি লিখতে হবে
কারণ কলাতে থাকে প্রাকৃতিক সুগার যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
আরো পড়ুনঃ মধুর উপকারিতা
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তারা অনেকেই ব্যায়ামের আগে বা পরে কলা খেয়ে
থাকেন এর কারণ হলো কলা খেলে ক্লান্তি দূর হয় এবং মাংসপেশীর কার্যক্ষমতা
বৃদ্ধি পায়। একটি সমীকরণে দেখা গেছে ক্রীড়াবিদ বা খেলোয়াড়রা যারা ডায়েট
করে থাকে তাদের সকলের খাদ্য তালিকায় কলা জায়গা করে নিয়েছে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্যকারী
যাদের ওজন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বা যারা অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেছেন
তাদের জন্যও কলা একটি উপযোগী খাবার। ডায়েট করার সময় আপনি আপনার খাদ্য
তালিকায় এই ফলটি রাখতে পারেন। কারণ কলাতে অত্যন্ত কম ফ্যাট থাকে এবং উচ্চ
ফাইবার থাকে যা ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত ফাইবার ফ্যাট ভরা রাখে এবং
অস্বাস্থ্যকর খাবার প্রবণতা কমায়। আপনি যদি প্রতিদিন সকালের নাস্তায় কলা
যোগ করতে পারেন তাহলে সারাদিন এনার্জি পাবেন। তাই সুস্থ থাকতে কলা
খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানুন এবং এই উপযোগী খাবারটি আপনার প্রতিদিনের
খাদ্য তালিকায় যুক্ত করুন।
মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে
কলাতে রয়েছে ভিটামিন বি ৬ যা মস্তিষ্কের কার্যক্রম উন্নত করে এবং
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। অর্থাৎ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য উপযোগী একটি
খাবার হল কলা। যারা নিয়মিত কলা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারবেন তাদের মানসিক চাপ
কমে যাবে এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত হবে। সবসময়ই হাসিখুশি জীবন যাপন করার
জন্য কলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি
ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য আমরা অনেকে অনেক প্রকার ক্রিম ফেসওয়াশ ব্যবহার
করি। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রে এর বিপরীত ঘটতে পারে। তবে আপনি যদি ত্বকের
উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে কলা ব্যাবহার করেন তাহলে কার্যকরী ফলাফল পেতে পারেন।
তোকে থাকা বিভিন্ন বালি রেখা ও কালো দাগ দূর করার জন্য কলার মাস তৈরি করে
মুখে লাগালে তত কমল ও উজ্জ্বল হয় আর এটি যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক তাই কোন
প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্ভাবনা নেই অর্থাৎ প্রাকৃতিক স্কিন কেয়ার
হিসেবে কলা দারুণ ও কার্যকরী সমাধান।
রক্তশূন্যতা রোধে কলা
আমাদের অনেকেরই রক্তশূন্যতার কারণে বিভিন্ন চিকিৎসা ও ওষুধ গ্রহণ করতে হয়।
অনেকের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কম থাকায় বিভিন্ন ধরনের সমস্যায়
পড়তে হয় বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি একটি বড় সমস্যা। কলাতে আয়রন
থাকে বটে তবে সেটি ভিটামিন সি শোষণ করে নেয়। তাই রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে
কলা বিশেষ ভূমিকা পালন করে। যাদের এই সমস্যা আছে বা ভবিষ্যতে এই সমস্যা থেকে
বাঁচতে চান তারা নিয়মিত কলা খেতে পারেন। অতিব সল্পমুল্যে কার্যকরী সমাধান
হিসেবে কাজ করবে।
হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা
আমাদের শরীরের মূল স্ট্রাকচার তৈরি হাড় দিয়ে। আর শক্তিশালী না হইলে শরীর
শক্তিশালী হয় না। বয়সীর সাথে সাথে শরীরের হাড় কমজোরি হয়ে পড়ে। তাই সবাই
বিশেষ করে বয়স্করা নিয়মিত কলা খেতে পারেন। আপনার পরিবারের বয়স্ক
ব্যক্তিদের নিয়মিত কলা খাওয়ার পরামর্শ দিবেন তাহলে শেষ বয়সে সুস্থ জীবন
যাপনে সহায়তা করবে।
কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে
একটি গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন একটি করে কলা অথবা সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয়টি
কলা খেলে কিডনির সমস্ত রোগের ঝুঁকি ৫০% পর্যন্ত কমে যায়। একবার চিন্তা করুন
সস্তায় একটি খাবার খাওয়ার ফলে যদি এত বড় একটি উপকার পাওয়া যায় তাহলে কেন
আমরা এই ফলটি খাওয়া থেকে বিরত থাকবো? কিডনির সমস্যা বড় সমস্যা। তাই এই
সমস্যা থেকে বাঁচতে নিয়মিত কলা খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কলা খাওয়ার
উপকারিতার শেষ নেই। কলাতে রয়েছে পটাশিয়াম যা কিডনিতে পাথর জমাতে বাধা দেয়।
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেলে কলা খাওয়ার উপকারিতা কি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা
করেছি। কোথায় আছি যা সহজে পাওয়া যায় তা আমরা গুরুত্ব দিতে চাই না যেমন একটি
সহজলভ্য ফল হল কলা সহজলভ্য হওয়ার ফলে আমরা অনেকেই কলা পছন্দ করি না অনেকেই এটি
খাদ্য তালিকায় রাখি না। কিন্তু কলা থেকে যে এতটা উপকার পাওয়া যায় তা
কল্পনারও বাইরে।
সকল সমস্যা সমাধানে প্রাকৃতিক খাবার এর চেয়ে ভালো উপকার আর কোথাও পাওয়া যাবে
না। ওজন নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি, কিডনির সমস্যা সমাধান, মানসিক
স্বাস্থ্য উন্নত করতে, হারের স্বাস্থ্য রক্ষা সহ অন্যান্য সকল প্রকার সমাধান
রয়েছে সহজলভ্য এই ফলটিতে।
নিয়মিত আমরা যে সকল খাবার খেয়ে থাকি সে খাবারের পাশাপাশি এক্সটা খাবার হিসেবে
আমরা কলা কে যুক্ত করতে পারি। সকালের নাস্তায় কলা খেতে পারি, বিকেল বেলায়
বিভিন্ন তেলে ভাজা, ঝাল মুড়ি ইত্যাদি না খেয়ে কলা খেতে পারি। এতে শরীর
স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, মন ভালো থাকবে, শক্তি ফিরে আসবে, কর্মশক্তি বৃদ্ধি পাবে।
তাই নিজে দেশীয় ফল খান অন্যকে দেশীয় ফল খাওয়ার পরামর্শ দিন।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url