গুগল ম্যাপ দিয়ে লাইভ লোকেশন শেয়ার করার উপায় ।। গুগল ম্যাপের অজানা ফিচার

গুগল ম্যাপ দিয়ে লাইভ লোকেশন শেয়ার করা সহ গুগল ম্যাপের অজানা সকল ফিচার নিয়েই আজকের আর্টিকেল। আপনি যদি মোবাইল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আজকের আর্টিকেলটি আপনার পড়া দরকার।
লাইভ-লোকেশন-শেয়ার-করার-উপায়
অজানা জায়গায় গিয়ে রাস্তা চেনার জন্য আমরা সাধারণত গুগল ম্যাপ এর ওপর ভরসা করি কিন্তু সেই google ম্যাপের এমন কিছু ফিচার লুকিয়ে আছে যেই ফিচারগুলো ব্যবহার করে আপনার জীবনকে আরো সহজ করে তুলতে পারবেন এবং আধুনিক করতে পারবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ

গুগল ম্যাপের অজানা ফিচার

শুধুমাত্র রাস্তা দেখানোই নয় বরং গুগল ম্যাপে লুকিয়ে আছে অজানা অজানা অনেক ফিচার। যেই ফিচারগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা নেই বললেই চলে। আশ্চর্য এই ফিচার গুলো সম্পর্কে জানলে এই অ্যাপটিকে আরও শক্তিশালী কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। ইন্টারনেট ছাড়া ব্যবহার করা থেকে শুরু করে এই অ্যাপ ব্যবহার করি ট্রাফিক সিগন্যাল সম্পর্কে জানা এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস আদালতের ভেতরে নেভিকেট করা সম্ভব।

এছাড়াও কোন রাস্তা দিয়ে আপনার গাড়িটি গন্তব্য স্থানে নিয়ে গেলি কম জ্বালানি খরচ হবে সেটাও জানতে পারবেন গুগল ম্যাপ থেকে। এমন আরো সকল ছোট ছোট কিন্তু কাজের ফিচার সমূহ নিয়েই আলোচনা করতে চলেছি। চলুন একে একে জানা যাক গুগল ম্যাপের অত্যাধুনিক সব ফিটার সম্পর্কে।

ইনডোর ম্যাপ

গুগল ম্যাপ শুধু বাহিরের জগতে নয় এখন আপনার অভ্যন্তরীণ জগৎকেও আরো সহজ করে তুলবে। গুগল ম্যাপ এর ইনডোর ফিচার ব্যবহার করে বিভিন্ন ভবনের ভেতরের নিখুঁত ভাবে নেভিগেট করতে পারবেন।গুগল ম্যাপ আপনাকে বড় শপিংমল, বিমানবন্দর, হাসপাতাল, স্টেডিয়ামের মতো ইনডোর স্থান গুলো ভেতরে দেখার সুযোগ করে দেয় এই ফিচারটির মাধ্যমে। ঘড়ে বসে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের কোথায় কি আছে তা জানতে পারবেন ইনডোর ফিচারটির মাধ্যমে।

অফলাইনে ম্যাপ ব্যবহার 

সাধারণত গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে চাইলে মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা যারা WiFi ব্যাবহার করি তাদের মোবাইলে MB না থাকায় নতুন কোন জায়গায় গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলার ভয় থাকে। আর মোবাইলে যেহেতু ইন্টারনেট নেই তাই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতেও পারবো না। কিন্তু এই সমস্যার সমাধান নিয়ে এসেছে গুগল ম্যাপ। এখন থেকে আপনি নির্দিষ্ট কোন স্থানের ম্যাপ আপনার মোবাইলে ডাউনলোড করে পরবর্তীতে যে কোন সময় সেই ম্যাপ দেখে গন্তব্য স্থানে পৌঁছাতে পারবেন।

নির্দিষ্ট এলাকার মানচিত্র ডাউনলোড করার জন্য কাঙ্খিত এলাকাটির নাম লিখে গুগল ম্যাপ সার্চ দিয়ে লোকেশন থেকে আপনি সেই স্থানের মানচিত্র ডাউনলোড করতে পারেন। এবং পরবর্তীতে গন্তব্য স্থানে পৌঁছানোর সময় রাস্তা হারিয়ে ফেললে সেই মানচিত্র দেখে রাস্তাটি খুঁজে পেতে পারেন

লাইভ লোকেশন শেয়ার

মনে করেন আপনারা দুই বন্ধু নতুন একটি জায়গায় গিয়ে হারিয়ে গেছেন এখন আপনিও এলাকায় নতুন তাই কিছুই চেনেন না অপরদিকে আপনার বন্ধু নতুন তাই সেও আপনাকে খুজে পাচ্ছে না এর সমাধানও পাবেন গুগল ম্যাপ এর কাছে। কারণ খুব সহজেই আপনি আপনার লাইফ লোকেশন আপনার বন্ধুর কাছে শেয়ার করে দিলেই আপনার বন্ধু আপনার কাছে পৌঁছে যেতে পারবে অথবা আপনার বন্ধুর লাইফ লোকেশন আপনার কাছে শেয়ার করলে আপনি তার শেয়ার কি তো লোকেশনে পৌঁছে দিতে পারবেন।

লোকেশন শেয়ার করতে প্রথমেই
  • আপনার মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন অন করুন।
  • এবার আপনার মোবাইলে থাকা লোকেশন চালু করুন।
  • গুগল ম্যাপ অ্যাপটি ওপেন করুন। 
  • উপরের ডানদিকে প্রোফাইল আইকনে ট্যাপ করুন।
  • এখান থেকে Location sharing অপশনে ক্লিক করুন। 
  • Share location এ ক্লিক করুন।
  • কতক্ষণের জন্য লোকেশন শেয়ার করতে চাচ্ছেন সেটা সেট করুন। 
  • আপনি নিজে বন্ধ না করা পর্যন্ত লোকেশন শেয়ার চালু রাখতে চাইলে until you turn this off অপশনটি সিলেক্ট করুন।
  • এবার নিচের যে কোন অপশনে ক্লিক করলেই একটি লিঙ্ক তৈরি হবে।
  • যার কাছে লোকেশন শেয়ার করতে চাচ্ছেন তাকে এই লিংক দিন।
  • এখন সেই ব্যক্তি মোবাইলে ইন্টারনেট কানেকশন এবং লোকেশন অন করে লিংকে ক্লিক করলে আপনার লোকেশন দেখতে পাবে।

ট্রাফিক জ্যাম চেকার

গুগল ম্যাপের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলেও এই অ্যাপটি ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য কোন রাস্তাটি বেশি ফাঁকা থাকবে অর্থাৎ যানজট মুক্ত রাস্তা খুঁজতে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন। গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করুন:

১) লাইভ ট্রাফিক আপডেট চেক করুন
  • গুগল ম্যাপ খুলুন এবং আপনার গন্তব্য সেট করুন।
  • "Directions" (নির্দেশনা) বোতামে চাপ দিন।
  • মানচিত্রে রাস্তার রং খেয়াল করুন:
    • সবুজ: যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক।
    • কমলা: মাঝারি ট্রাফিক।
    • লাল: তীব্র যানজট।
  • যেসব রাস্তা লাল দেখাচ্ছে, সেগুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
২) বিকল্প রাস্তা নির্বাচন করুন
রুট দেখানোর পর, স্ক্রিনের ওপরের দিকে থাকা "Alternative Routes" অপশনটি দেখুন। সাধারণত গুগল ম্যাপ দ্রুততম পথ চিহ্নিত করে দেয়, তবে আপনি অন্য কম ট্রাফিকযুক্ত রাস্তা বেছে নিতে পারেন।

৩) "Avoid Traffic" অপশন ব্যবহার করুন
  • গুগল ম্যাপে আপনার গন্তব্য নির্ধারণের পর "Route Options" এ যান।
  • "Avoid Highways" বা "Avoid Tolls" অপশন চালু করলে ব্যস্ত সড়ক এড়িয়ে চলতে পারবেন।

রুট রিমাইন্ডার সেট

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না প্রযুক্তির এই যুগে এসেও এই কথাটি কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। প্রযুক্তির ব্যবহারে আমাদের সময় সাশ্রীর হয়েও কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের ভুলের কারণে মাশুল দিতে হয়। কিন্তু আমরা সেই প্রযুক্তির ব্যবহার করেই আমাদের সেই ভুলগুলোর সমাধান আগে থেকেই বের করে রাখতে পারি। গুগল ম্যাপের আরো একটি খুবই ছোট কিন্তু কাজের ফিচার হল 'রিমাইন্ডার' এই এই ফিচারটির মাধ্যমে আপনার গন্তব্য ঝুঁকিমুক্ত করতে পারবেন। রুট রিমাইন্ডার মূলত একটি এলার্ম এর মতো। 
অনেক সময় আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু জায়গায় যেতে হয় কিন্তু সেই স্থানের নির্দিষ্ট একটি সময়ে পৌঁছাতে হয় লেট করে রওনা করলে ওর সাথে দেরি হয়ে যায় আবার সময়ের আগে পৌঁছালেও সেখানে গিয়ে অপেক্ষা করতে বোরিং ফিল হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন গুগল ম্যাপের এই রুট রিমাইন্ডার ব্যবহার করে আপনি কোন স্থানে যেতে চান সেটি সেট করে রিমাইন্ডার চালু রাখলে আপনার বাসার দূরত্ব অনুযায়ী কখন রওনা করতে হবে তার কিছুক্ষণ আগে গুগল ম্যাপ আপনাকে এলার্মের মাধ্যমে সজাগ করবে এবং জানিয়ে দেবে আপনার বের হওয়ার সময় এগিয়ে আসতে।

ফুয়েল সাশ্রয়ী মুড

আমরা যে কোন অচেনা জায়গায় যেতে মানুষের চেয়ে গুগল ম্যাপকে বেশি বিশ্বাস করি। কিন্তু আমরা কি জানি গুগল ম্যাপ সাধারণত আমাদেরকে গন্তব্য স্থানে যাওয়ার জন্য কোন রাস্তা দেখায়? গুগল ম্যাপ সাধারণত আমাদেরকে সে সকল রাস্তার রুট দেখিয়ে দেয় যে সকল রাস্তা দিয়ে অধিক পরিমাণ মানুষ চলাচল করে। কিন্তু আপনি চাইলে এই গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এমন রাস্তা খুঁজে পেতে পারেন যে রাস্তা ব্যবহার করলে আপনার ফুয়েল সাশ্রয় হবে অর্থাৎ আপনার গাড়ির জ্বালানি কম খরচ করে আপনার গন্তব্যস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।
গুগল-ম্যাপের-অজানা-ফিচার

গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে গন্তব্য স্থানে যেতে আপনার ফুয়েল সাশ্রয় করতে চাইলে প্রথমেই মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশন এবং লোকেশন অন করুন। তারপর google ম্যাপ অ্যাপটি ওপেন করে গন্তব্য স্থানের নাম লিখে Directions অপশনে ক্লিক করুন। তারপর Drive অপশন থেকে টুলবারে ক্লিক করে Prefer fuel-efficient routes অপশনে টিক চিহ্ন দিয়ে দিয়ে start বাটনে ক্লিক করে গুগল ম্যাপে দেখানো রাস্তা অনুযায়ী আপনার গন্তব্যে পৌঁছে যান এতে করে গন্তব্যে যেতে কোন রাস্তা ব্যবহার করলে গাড়ির জ্বালানি সাশ্রয় হবে সেটি গুগল আপনাকে সাজেস্ট করবে।

গুগল ম্যাপ দিয়ে বিজনেস

গুগল ম্যাপের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হলো মাই বিজনেস টুলস। এই ফিতাটির মাধ্যমে আপনি আপনার লোকাল বিজনেস কে আরও বেশি প্রফেশনাল করে তুলতে পারেন। মনে করেন আপনার একটি রেস্টুরেন্ট আছে আপনার রেস্টুরেন্টের লোকেশন এমন এক জায়গায় যেখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকরা আসে কিন্তু আপনার রেস্টুরেন্টে তেমন কোন কাস্টমার আসে না। আপনি গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আপনার রেস্টুরেন্টে কাস্টমার নিয়ে আসতে পারেন।

গুগল ম্যাপের মাধ্যমে আপনার বিজনেসের গ্রোথ বাড়াতে চাইলে আপনার রেস্টুরেন্টের নাম দিয়ে google ম্যাপে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার রেস্টুরেন্টের ঠিকানাটি গুগল ম্যাপে এড করুন। এর ফলে পর্যটকরা গুগল ম্যাপ ব্যবহার করে এই স্থানে আসলে অটোমেটিক তার মোবাইলে আপনার রেস্টুরেন্টটি শো করবে। অর্থাৎ গুগল ম্যাপ থেকেই থেকে আপনি ফ্রিতে মার্কেটিং করে নিতে পারেন। আপনার রেস্টুরেন্টের নাম অবশ্যই আকর্ষণীয় হওয়া চাই তবে ম্যাপ দেখে পর্যটকরা আপনার রেস্টুরেন্টে আসবে এবং আপনার বিজনেস বাড়বে।

টাইমলাইন হিস্ট্রি

আপনি যদি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে এই সেকশনটি আপনার জন্যই। মাধ্যমে আপনি কোন বছরের কোন মাসের কত তারিখে এমনকি কয়টার সময় আপনি কোন জায়গায় গিয়েছিলেন সেটি চেক করতে পারবেন। আপনি কবে কোথায় কোথায় গিয়েছেন তার বিস্তারিত ইতিহাস গুগল সংরক্ষণ করে রাখে। সংরক্ষিত হিস্ট্রি দেখে আপনি উপকৃত হতে পারবেন এবং তা রেফারেন্স হিসেবে যেকোনো জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন।

শেষ কথা

ডিজিটাল এই যুগে এসে প্রযুক্তির ব্যবহার করে আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত আমরা সহজ করার চেষ্টা করে আসছি। কিন্তু আমাদের ব্যবহৃত কিছু জিনিসের মাঝেও রয়েছে নানা রকম সব প্রযুক্তির খেলা যা আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করার পরেও জানি না। তেমনি একটি অ্যাপ হল google ম্যাপ। এই টুলস টির সাহায্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজকে সহজ করে তুলতে পারি।

আমাদের জীবনে কিভাবে গুগল ম্যাপের অজানা ফিচারগুলো কাজে আসে সেই বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি আজকের আর্টিকেলে। আজকের আর্টিকেলের বাইরেও google ম্যাপ এর কোন ফিচার যদি আপনার জানা থাকে তাহলে কমেন্টে জানাইতে ভুলবেন না।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কোনো কমেন্ট করা হয় নি
কমেন্ট করতে ক্লিক করুন

শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।

comment url