শীতকালীন ফলমূল ও শীতকালীন শাক সবজির উপকারিতা
শীতকালে যে সকল ফলমূল ও শাকসবজি পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের
উপকারিতা। আজকের আর্টিকেলে শীতকালীন বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি এবং তাদের উপকারিতা
নিয়ে আলোচনা করবো।
শীতকাল বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি ঋতু। শীতকাল শুধু ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় নয় বরং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর ফলমূল ও শাক সবজির সমাহার নিয়ে আসে। শীতকালে পাওয়া যায় এমন ফলমূল ও শাকসবজি সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি আমাদের দৈনিক পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পেজ সূচিপত্রঃ কোন অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
শীতকালে যে সকল শাকসবজি পাওয়া যায়
শীতকালে বাজারে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সকল শাকসবজি
পুষ্টিগুণে ভরপুর এবং অত্যন্ত সহজলভ্য শীতকালীন তাপমাত্রা কম থাকায় এ সময়
শাকসবজি তাজা ও খেতে সুস্বাদু হয় এবং শীতকালীন বিভিন্ন সবজি রান্না করে সালাত
করে এবং ভাজি হিসেবে খাওয়া যায়। শীতকালীন কিছু জনপ্রিয় শাকসবজির তালিকা দেওয়া
হলো:
- নভেম্বর মাসের সবজি (শীতের শুরু)
- বাঁধাকপি
- ফুলকপি
- মূলা
- টমেটো
- ডিসেম্বর মাসের সবজি (তীব্র শীত)
- গাজর
- শিম
- কুমড়া
- বীটরুট
- জানুয়ারি মাসের সবজি (শীতের মধ্যকাল)
- লাউ
- সরিষা শাক
- পালং শাক
- লাল শাক
- ফেব্রুয়ারি মাসের সবজি (শীতের শেষ পর্যায়)
- শসা
- করলা
- বরবটি
শীতকালীন শাক সবজির উপকারিতা
শীতের এই মৌসুমে বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজি পাওয়া যেগুলোর মধ্যে বিভিন্ন
আলাদা আলাদা পুষ্টিগুণে ভরপুর।
- বাঁধাকপি: বাঁধাকপিতে ভিটামিন C, ভিটামিন K, ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- ফুলকপি: ভিটামিন C, ভিটামিন K, ভিটামিন B6, পটাশিয়াম এবং ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় আর মজবুত রাখে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং ডাইবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
- মূলা: মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ফাইবার, ফলেট এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকায় কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে, লিভার পরিষ্কার রাখে, শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হজমে সহায়ক।
- টমেটো: টমেটোতে ভিটামিন C, ভিটামিন K, লাইকোপেন, পটাশিয়াম এবং ফাইবার রয়েছে। যার ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
- গাজর: ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন K, পটাশিয়াম ও ফাইবারে ভরপুর হওয়ার কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, হজম শক্তি উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- শিম: শিম থেকে ভিটামিন C, প্রোটিন, ফাইবার, ফলেট ও আয়রন পাওয়া যায়। তাই, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, হাড় মজবুত করে, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- কুমড়া: বিটা-ক্যারোটিন, ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন E, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, হজম শক্তি উন্নত করে, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং ওজন কমাতে সহায়ক
- বীটরুট: আয়রন, ফলেট, ভিটামিন C, ম্যাগনেসিয়াম ও নাইট্রেট পাওয়া যায়। তাই, রক্তস্বল্পতা দূর করে, রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করে, হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায় এবং প্রদাহ কমিয়ে স্ট্যামিনা বৃদ্ধি করে।
- লাউ: লাউয়ে থাকা ফাইবার, পানি, ভিটামিন C, ভিটামিন B, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হজম শক্তি বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ওজন কমাতে সাহায্য করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং কিডনি ও লিভার পরিষ্কার রাখে।
- সরিষা শাক: ভিটামিন A, ভিটামিন C, ভিটামিন K, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফাইবার রয়েছে। যার ফলে হাড় মজবুত করে, রক্তস্বল্পতা দূর করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, চোখের দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে এবং গ্যাস ও হজমের সমস্যা দূর করে।
- পালং শাক: পালং শাক রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে, আহার ও দাঁত মজবুত করে, ত্বক ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে, হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন A, C, K, ম্যাগনেসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট।
- লাল শাক: প্রোটিন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন টাকায় রক্তস্বল্পতা দূর করে, লিভার পরিষ্কার রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হাড় শক্তিশালী করে, ত্বক ও চুল ভালো থাকে।
- শসা: পানি ভিটামিন C, ভিটামিন K, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় শরীরকে হাইড্রেট রাখে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, হজমশক্তি উন্নত করে, ওজন কমাতে সাহায্য করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করে।
- করলা: ভিটামিন, ফলেট, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফাইবার থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্তচাপ কমায়, ব্রণসহ ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূর করে, হজম শক্তি উন্নত করে এবং লিভার পরিষ্কার রাখে।
- বরবটি: বরবটি থেকে প্রোটিন ভিটামিন সি ফলেট আয়রন ও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। তাই ওজন কমায়, পেটের সমস্যা দূর করে, হৃদরোগ প্রতিরোধ করে, হাড় মজবুত করে, রক্তশূন্যতা দূর করে এবং শরীর শক্তিশালী করে।
শীতকালে যে সব সবজি খাওয়া উচিত নয়
শীতের আবহাওয়ায় বেশিরভাগ সবজি তাজা ও পুষ্টিকর থাকার পরেও নির্দিষ্ট কিছু
সবজি এড়িয়ে চলা উচিৎ। বিশেষ করে যেগুলো শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নষ্ট করতে
পারে সে সকল সবজি। যেমন বেগুন হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে তাই যাদের গ্যাসের
সমস্যা রয়েছে তাদের বেগুন এড়িয়ে চলা উচিত। এবং কাঁচা সবজি যেমন মুলা,
বাঁধাকপি বা ফুলকপি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সাথে অতিরিক্ত পরিমাণে
পাকা টমেটো না খাওয়ায় ভালো। দীর্ঘদিন সংরক্ষিত রাখা সবজিও শীতকালে
এড়িয়ে চলা উচিৎ।
শীতকালে যে সকল ফল পাওয়া যায়
শীতকালে যে সকল রসালো ফল বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি
বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর। অঞ্চলভেদে শীতকালে অনেক ধরনের ফল উৎপাদন হলেও
প্রতিটি এলাকাতেই সেই ফলগুলো সহজলভ্য।
- নভেম্বর মাসের ফল (শীতের শুরু)
- আমলকী
- বড়ই
- ডিসেম্বর মাসের ফল (তীব্র শীত)
- কমলা
- মালটা
- পেয়ারা
- জানুয়ারি মাসের ফল (শীতের মধ্যকাল)
- আপেল কুল
- খেজুরের গুড়
- ফেব্রুয়ারি মাসের ফল (শীতের শেষ পর্যায়)
- তরমুজ (শীতের শেষে আসতে শুরু করে)
- স্ট্রবেরি
শীতকালীন ফলের উপকারিতা
শীতকালে যে সকল রসালো ফল বাজারে পাওয়া যায় সেগুলো সুস্বাদু হওয়ার পাশাপাশি
বিভিন্ন পুষ্টিগুনে ভরপুর। অঞ্চলভেদে শীতকালে অনেক ধরনের ফল উৎপাদন হলেও
প্রতিটি এলাকাতেই সেই ফলগুলো সহজলভ্য।
- আমলকি: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আয়রন ক্যালসিয়াম ফাইবার এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা ও চুলের স্বাস্থ্য উন্নত করে, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং লিভার ও হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
- বড়ই: শীতকালীন এই ফল থেকে ভিটামিন C ভিটামিন A পটাশিয়াম আয়রন ও ফাইবার পাওয়া যায়। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে করে, ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, শক্তি বৃদ্ধি করে, ত্বকের উজ্জলতা ও চুলের পুষ্টি বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমায়।
- কমলা: ভিটামিন C, ফলেট, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হজম শক্তি উন্নত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- মালটা: ভিটামিন C, ভিটামিন A, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, আজমে সাহায্য করে লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় এবং ব্রণ কমায়, ওজন কমাতে সহায়ক এবং ডিহাইড্রেশন দূর করে।
- পেয়ারা: প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন A, আয়রন, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে, হজম শক্তি বাড়ায়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হার্টের কার্যকারিতা উন্নত করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রাখে।
- আপেল কুল: ফাইবার পানি ভিটামিন সি ম্যাগনেসিয়াম পটাশিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় হজম শক্তি উন্নত করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে, শরীরের পানি ভারসাম্য বজায় রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
- খেজুরের গুড়: ভিটামিন, আয়রন, ফাইবার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ করে, হজম শক্তি বাড়ায়, হার্টের স্বার্থের জন্য উপকারী, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি করে।
আরো পড়ুন: সজনে পাতার উপকারিতা
- তরমুজ: তরমুজের প্রচুর পরিমাণ পানি ভিটামিন পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ওজন কমাতে সহায়ক, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং শরীর হাইড্রেশন বজায় রাখে।
- স্ট্রবেরি: এই ফলে ভিটামিন C, ম্যাঙ্গানিজ, ফোলেট, আয়রন, ফাইবার ও পটাশিয়াম রয়েছে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
শীতের এই ঠাণ্ডা মৌসুমে শীতকালীন শাকসবজি ও ফলমূল মানুষের শরীর ও মন উভয়ের
জন্য খুবই উপকারী। শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগ মুক্ত রাখতে শীতকালীন শাকসবজি
বেশি বেশি খাওয়া উচিত। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় সুষম খাবারের অভ্যাস
গড়ে তোলার জন্য শীতকালে সবজি ও ফলমূল খাদ্য তালিকায় যুক্ত করতে পারি।
শীতকালীন ফল মূল ও শাকসবজি শুধুমাত্র সুস্বাদু নয় বরং এগুলো আমাদের পুষ্টি
চাহিদাও মেটায়। তাই সকলেই শীতের পুষ্টিকর সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করে সুস্থ থাকার
জন্য লড়াই করি।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url