শবে কদর এর দোয়া ও আমল
পেজ সূচিপত্রঃ কোন অংশ পড়তে চান ক্লিক করুন
শবে কদর বা লাইলাতুল কদর মানে কি
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব এবং দোয়া জেনে নিন। লাইলাতুল কদর ইসলামের এক গুরুত্বপূর্ণ
এবং মহিমান্বিত রাত, যা রমজান মাসের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে একটি। পবিত্র
কুরআনে বলা হয়েছে, এই রাত হাজার মাসের থেকেও উত্তম। এ রাতে কুরআন নাজিল হয়েছে, যা
মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনা এবং আল্লাহর রহমতের প্রতীক। লাইলাতুল কদরের রাতটি
মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের বিশেষ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত। এই রাতে আল্লাহর
ফেরেশতারা পৃথিবীতে নেমে আসেন এবং আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করেন। রাতটি
ইবাদত, দোয়া, এবং ক্ষমা প্রার্থনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মুমিনগণ এই রাতে বেশি করে নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত এবং দোয়া করেন। আল্লাহ এই
রাতে মুমিনদের গুনাহ মাফ করেন এবং তাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ দান করেন। এটি এমন
একটি রাত, যা মানুষের তাকওয়া বৃদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ় করার সুযোগ
দেয়। লাইলাতুল কদর সন্ধান করার জন্য রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে মুমিনগণ
ইবাদতে মনোযোগী হন। আল্লাহ তাআলা এই রাতে যে বরকত ও ফজিলত রেখেছেন, তা সমগ্র
মুসলিম উম্মাহর জন্য এক মহা নেয়ামত। সুতরাং, লাইলাতুল কদরের রাত মুসলিম জীবনে
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের এক মহামূল্যবান সুযোগ।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কুরআনের বাণী
লাইলাতুল কদর, ইসলামের ইতিহাসে এক মহিমান্বিত রাত, যা কুরআনে বিশেষভাবে উল্লেখিত।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব এবং দোয়া জেনে নিন। এটি সেই রাত, যখন পবিত্র কুরআন নাজিল
হয়েছিল মানবজাতির জন্য দিকনির্দেশনা হিসেবে। কুরআনের সূরা আল-কদরে আল্লাহ তাআলা
এই রাতের মর্যাদা এবং গুরুত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন। এই রাত হাজার
মাসের চেয়েও উত্তম, যা মুমিনদের জন্য এক অনন্য সুযোগ। কুরআনের বাণীগুলো লাইলাতুল
কদরের তাৎপর্য এবং এর অসীম বরকত তুলে ধরে, যা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অনুপ্রেরণা
হয়ে দাঁড়ায়। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব কুরআনের বাণীতে। কুরআনে সূরা আল-কদরে আল্লাহ
তাআলা বলেছেন: "নিশ্চয়ই আমি এটি লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ করেছি। লাইলাতুল কদর কি তা
কি তুমি জান? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।" (সূরা আল-কদর: ১-৩)। এই
আয়াতে স্পষ্ট যে, লাইলাতুল কদরের রাতের ইবাদতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের
চেয়েও বেশি। এই রাতে ফেরেশতারা আল্লাহর আদেশ পালন করতে পৃথিবীতে নেমে আসেন। রাতটি
পূর্ণ শান্তি ও বরকতপূর্ণ, যা ফজর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।
এছাড়া সূরা আদ-দুখানে বলা হয়েছে: "আমরা এটি এক বরকতময় রাতে নাজিল করেছি।" এই আয়াত
থেকে বোঝা যায় যে, লাইলাতুল কদর এক বরকতময় রাত, যখন আল্লাহর রহমত এবং ক্ষমা
অবিরাম বর্ষিত হয়। লাইলাতুল কদরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এটি কুরআনের
নাজিলের রাত। আল্লাহ তাআলা এই রাতের মাধ্যমে মানবজাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে
নিয়ে গেছেন। কুরআন নাজিলের এই মুহূর্তটি প্রতিটি মুসলিমের জীবনে বিশেষ তাৎপর্য
বহন করে। এটি আত্মার পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সময়।
লাইলাতুল কদরের রাতে পড়ার জন্য দোয়া
লাইলাতুল কদরে পড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া এবং তার উপকারিতা নিচে দেওয়া
হল:
- লাইলাতুল কদরের গুরুত্বপূর্ণ দোয়া। লাইলাতুল কদরের রাতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দোয়া হল (আল্লাহুম্মা ইননাকা আফু' তুহিব্বুল আফু ফাআফু অগ্নি)। এই দোয়াটি মহান নবী (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় যাওয়ার সময় এবং রমজান মাসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে উচ্চারণ করতেন। এর অর্থ হলো, "হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন।" এই দোয়া লাইলাতুল কদরের রাতে বিশেষভাবে পড়া উচিত, কারণ এই রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন।
- এই দোয়া একদিকে যেমন আল্লাহর ক্ষমার জন্য প্রার্থনা, তেমনি এটি মুমিনের পাপমোচন এবং আত্মিক পরিশুদ্ধির জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসু। তাছাড়া এই দোয়া মুমিনের মনকে আল্লাহর রহমত ও দয়া অনুভব করতে সহায়তা করে এবং আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। লাইলাতুল কদরের রাতে এই দোয়া পড়লে, আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত ও বরকত লাভ করা যায়।
- লাইলাতুল কদরের রাতে অন্যান্য দোয়া। এছাড়াও, লাইলাতুল কদরের রাতে আরও কিছু বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা আল্লাহ তাআলার রহমত প্রাপ্তি এবং গুনাহ মাফ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। (রাব্বানা আতিনা ফি দুনিয়াহ হাসানাহ ওয়াফি আখিরাহ হাসানাহ ওয়াকিনা আযাবান্নার)। এর অর্থ, "হে আমাদের রব! আমাদেরকে দুনিয়াতে ভালো ও আখিরাতে ভালো দান করুন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন।" এই দোয়া মানবজীবনের সকল দিকেই আল্লাহর সাহায্য কামনা করে এবং এটি মানুষকে আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে।
- আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া যা লাইলাতুল কদরের রাতে পড়া উচিত, তা হলো (আল্লাহুম্মা ইননী আস'আলুকা বি রহমতিকা লতী ওয়াসিআত কুল্লা শেইইন আন তাগফির লি)। এর অর্থ, "হে আল্লাহ! আমি তোমার সেই রহমতের মাধ্যমে তোমার কাছে দোয়া করছি, যা সবকিছুতে বিস্তৃত, যাতে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।" এই দোয়াটি বিশেষভাবে আত্মবিশ্বাসী এবং আল্লাহর অশেষ দয়া ও ক্ষমার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী।
লাইলাতুল কদরের রাতে দোয়া করা, বিশেষত এই গুরুত্বপূর্ণ দোয়া গুলো পাঠ করা,
মুমিনদের জন্য এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কারণ, এই রাতেই আল্লাহ তাআলা তার
বান্দাদের সকল পাপ মাফ করে দেন এবং পরবর্তী বছরের জন্য তার ভাগ্য নির্ধারণ করেন।
লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিসের বর্ননা
লাইলাতুল কদর, রমজান মাসের শেষ দশ রাতের মধ্যে একটি অত্যন্ত পবিত্র রাত, যার
ফজিলত ও গুরুত্ব সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "যে
ব্যক্তি ইমানের সাথে এবং পুরস্কারের আশায় লাইলাতুল কদরে নামাজ পড়বে, তার সমস্ত
গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" (বুখারি, মুসলিম) এই হাদিসটি লাইলাতুল কদরের বিশেষ
মর্যাদার প্রতি ইঙ্গিত করে। এক আরেকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, "লাইলাতুল
কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।" (সুরা আল-কদর) এর মাধ্যমে এটি স্পষ্ট যে, এই রাতের
ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। অতএব, মুসলিমদের উচিত এই রাতের গুরুত্বকে
উপলব্ধি করে, ইবাদত এবং দোয়া করতে চেষ্টা করা।
হাদিসে আরও উল্লেখ আছে যে, লাইলাতুল কদর রাতটি কখন হবে তা একেবারে নির্দিষ্ট নয়,
তবে রমজান মাসের শেষ দশ রাতে এটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর কিছু হাদিসে বলা হয়েছে
যে, একসাথে তিনটি রাত ২১, ২৩, ২৫ লাইলাতুল কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই রাতে
আল্লাহ তাআলা তাদের পাপ মাফ করেন যারা সত্যিকারভাবে তাওবা করে এবং তাকে ভালোবাসে।
অপর একটি হাদিসে এসেছে, "যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরকে জানিয়ে নামাজ পড়ে এবং আল্লাহর
কাছে দোয়া করে, তার দোয়া কবুল হবে।" (আবু হুরাইরা, সহিহ মুসলিম) হাদিস থেকে জানা
যায় যে, এই রাতে ইবাদত, দোয়া, তাওবা, তাহাজ্জুদ নামাজ, তাসবিহ পড়া এবং আল্লাহর
প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে বিভিন্ন আমল করা উচিত।
লাইলাতুল কদরের রাতের আমল
শবে কদরের রাতে বিশেষ কিছু আমল ও ইবাদত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লাইলাতুল কদরের
গুরুত্ব এবং দোয়া জেনে নিন। এই রাতের উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করা,
পাপ মাফ করানো, এবং আখিরাতে সফলতার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে আশীর্বাদ গ্রহণ করা।
এক্ষেত্রে প্রথমে শবে কদরের রাতের নামাজ পড়া অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ
(সঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি শবে কদরে ইমানের সাথে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে নামাজ
আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।" নামাজের পরে, লাইলাতুল
কদরের বিশেষ দোয়া পড়া উচিত। এই দোয়াটি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং তার
মাগফিরাত প্রাপ্তির জন্য সাহায্য করে।
এছাড়া, শবে কদরের রাতে অনেক মুসলিম তাহাজ্জুদ নামাজ পড়েন। তাহাজ্জুদ নামাজের
মাধ্যমে আল্লাহর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করা যায় এবং এই রাতে অধিক ফযিলত পাওয়া যায়।
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হল কুরআন তিলাওয়াত করা। এই রাতে কুরআন তিলাওয়াত করে
আল্লাহর কাছে নিজেকে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা উচিত। এর পাশাপাশি, কিছু মুসলিম
দান-খয়রাত প্রদান করে থাকেন, যা তাদের আখিরাতে সাফল্য আনতে সাহায্য করে। বিশেষত
এই রাতে যিকর এবং তাসবিহ পড়া অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। এক্ষেত্রে জাতীয় যিকর করা
উৎসাহজনক। শবে কদরের রাতকে ইবাদত, দোয়া, এবং তাওবা করতে পূর্ণভাবে ব্যবহারের
মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভ সম্ভব। এটি এমন একটি রাত, যেখানে বান্দার
প্রতিটি ইবাদত এবং দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়, যদি তা আন্তরিকভাবে করা হয়।
লাইলাতুল কদরের ফজিলত সমূহ
লাইলাতুল কদর এক বিস্ময়কর রাত, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলে কুরআনে বর্ণিত
হয়েছে। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব এবং দোয়া জেনে নিন। এই রাতের ইবাদত হাজার মাসের
ইবাদতের চেয়ে বেশি মূল্যবান। আল্লাহ তাআলা এই রাতের মাধ্যমে তার বান্দাদের বিশেষ
ক্ষমা ও রহমত প্রদান করেন। এই রাতে যে ব্যক্তি ইবাদত করে, তার পূর্ববর্তী সকল
গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। লাইলাতুল কদর হলো ক্ষমা ও বরকতের রাত, যেখানে বান্দা
আল্লাহর কাছ থেকে অশেষ রহমত পায়। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের দোয়া কবুল
করেন এবং তার সৌভাগ্য ও সফলতার পথ খুলে দেন। এই রাতে আল্লাহ তাআলা তার প্রতি
প্রেম ও মাগফিরাত প্রদানের মাধ্যমে বান্দার জন্য পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেন।
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন যে, লাইলাতুল কদরের রাতে যা কিছু প্রার্থনা করা হয় তা
আল্লাহ কবুল করেন।
এছাড়াও রাতের ইবাদত অন্যান্য রাতের ইবাদতের চেয়ে অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ, কারণ এক
রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমান হয়ে থাকে। কদরের রাতের ইবাদত একান্তভাবে
আল্লাহর কাছ থেকে দয়া এবং পরিত্রাণের সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। এই রাতের মাধ্যমে
আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য আখিরাতের অশেষ পুরস্কারের ব্যবস্থা করেন। লাইলাতুল
কদরের বিশেষ দোয়া ও তাসবিহ আল্লাহর কাছে মাফ ও কল্যাণ অর্জনের পথ খুলে দেয়। অর্জন
করতে পারে। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতিটি দোয়া ও প্রার্থনা সহজে কবুল
করেন। কদরের রাতের ইবাদত ও দোয়া মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এককথায়, এই রাত হলো আল্লাহর বিশেষ রহমতের, ক্ষমার ও আশীর্বাদের
রাত, যা মুসলিমদের জন্য অমূল্য।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url