ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় ।। মোটা না হওয়ার কারণ কি

মানুষের ইচ্ছার শেষ নেই। কেউ অতিরিক্ত পাতলা হওয়ার কারণে মোটা হতে চায়। আবার কেউ মোটা থেকে পাতলা হতে চাই। আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করব মোটা না হওয়ার কারণ কি। এবং কিভাবে আপনি মোটা বা স্বাস্থ্যবান হবেন। একটা বিষয় মনে রাখবেন মোটা বলতে শুধু শরীর মোটা বা ভুঁড়ি বৃদ্ধি না। বরং আলোচনা করা হবে কিভাবে আপনি স্বাস্থ্যবান বা পরিপুক্ত হবেন। এবং ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে।
ওজন বৃদ্ধি করা বা বা স্বাস্থ্যবান হওয়া সবারই স্বপ্ন এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য প্রথমে ওই মোটা না হওয়ার কারণ কি সেটা খুঁজে বের করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কিছু নিয়ম কানুন মেনে কিছু ব্যায়াম করতে হবে এবং ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় সমূহ জেনে খাদ্য তালিকায় কিছু পরিবর্তন আনা লাগবে তাহলেই আশা করা যায় ওজন বৃদ্ধি করে স্বাস্থ্যবান হওয়া যাবে।

পোস্ট সূচিপত্রঃ

মিল্কশেক এবং মোটা হওয়া

ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন লোকাল বিজ্ঞাপনে এক প্রকার মিল্কশেক দেখানো হয়। এবং দাবি করা হয় এই মিল্কশেক নিয়মিত খেলে মাত্র ২-৩ মাসের মধ্যে স্বাস্থ্যবান হওয়া যায়। এবং যে সকল পেজ থেকে এসব বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয় তাদের অনেক রিভিউও দেখা যায়। তাহলে এখন প্রশ্ন মাত্র ২ মাসেই কি মোটা হওয়া সম্ভব.? উত্তর না। ২-৩ মাসের ভিতর স্বাভাবিক নিয়মে মোটা/স্বাস্থ্যবান হওয়া সম্ভব না। তাহলে তারা কিভাবে দাবী করছে বা মোটা হওয়ার পর মানুষের রিভিউ দিচ্ছেই বা কেন.? এটার পেছনে বেশ ক্ষতিকর একটা কারণ লুকিয়ে আছে। চলুন দেখে আসি

ইন্টারনেটে যে মিল্কশেক পাওয়া যায় তার মধ্যে কিছু কিছু সম্পূর্ন ভুয়া। এবং মিল্কশেক পাওয়া যায় যেগুলো নিয়মিত খাওয়ার ফলে ২-৩ মাসের মধ্যেই আপনাকে মোটা দেখাইবে। হ্যাঁ মোটা দেখাইবে কিন্তু, যে কারণে মোটা হতে চাচ্ছেন সেই কারণ হাসিল হবে না। অর্থাৎ, এই সকল মিল্কশেক শরীরের বিভিন্ন শক্তি উপাদান ব্যবহার করে আপনার শরীরকে মোটা করবে। ফলে প্রত্যক্ষভাবে কোন সাইড ইফেক্ট দেখতে না পেলেও আপনার শরীরের শক্তি দিন দিন হ্রাস পাবে এবং মিল্ক শেপ খাওয়ার ফলে আপনি মোটা হবেন ঠিকই কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।

একটা কথা আপনাকে সবসময় মনে রাখতে হবে যেটি খুব সহজে পাওয়া যায় সেটি খুব সহজেই হারাইতেও হবে। দীর্ঘস্থায়ীভাবে মোটা হতে চাইলে আপনাকে কমপক্ষে ৬-৮ মাস পরিশ্রম করতে হবে। নিচে দেখানো ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় এবং বৈজ্ঞানিক কিছু নিয়ম কানুন মেনে ব্যায়াম ও খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনতে হবে।

মোটা হওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা

মোটা হওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা দুইই থাকতে পারে, এবং এটি মূলত শরীরের গঠন, স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে। চলুন, মোটা হওয়ার কিছু সাধারণ উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করি 
উপকারিতা:
শরীরে অতিরিক্ত মাংসপেশি শীতকালে তাপ ধরে রাখতে সাহায্য করে, ফলে শীতকালীন পরিবেশে মোটা মানুষ দীর্ঘ সময় টিকতে পারে। অতিরিক্ত চর্বি বা মাংসপেশি শরীরের অঙ্গগুলোকে আঘাতের থেকে কিছুটা সুরক্ষা প্রদান করতে পারে। এবং শরীরে অতিরিক্ত পুষ্টি জমা হতে পারে, যা স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক হতে পারে। আবার কিছু মানুষ মোটা হলে আত্মবিশ্বাসী অনুভব করেন, কারণ তারা শরীরের গঠন নিয়ে বেশি খুশি থাকতে পারেন। এই মনোভাব কিছু ক্ষেত্রে তাদের সামাজিক বা পেশাগত জীবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলো যদি আপনার জন্য উপকারি মনে হয় তাহলে ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়ে চেষ্টা করে দেখতে পারেন আপনিও।
অপকারিতা:
অতিরিক্ত মাংসপেশি বা চর্বি থাকার ফলে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, এবং স্ট্রোকের মতো অসুখের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। একই সাথে শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকার কারণে হাড়, জয়েন্ট, এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে, অনেক সময় মোটা ব্যক্তিদের নিয়ে হাস্যরস বা তিরস্কার করা হয়, যা আত্মবিশ্বাসে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত ওজন শ্বাসনালীতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয় এবং কিছু ক্ষেত্রে হাঁপানি বা নিঃশ্বাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। মোটা হওয়ার ফলে কিছু কিছু সময় হতাশা বা উদ্বেগের সৃষ্টিও হতে পারে।

ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়

ইসলামিক স্কলারদের মতে ইসলামে মোটা হওয়ার বিষয়ে নির্দিষ্টভাবে কোন আমলের কথা বলা নেই। তবে কারো কারো মতে মোটা হওয়ার জন্য নিচের আমলটি করা যেতে পারে "প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর ১১বার করে ইস্তেগফার, দুরুদ শরীফ ও সূরা ফাতিহা একই সাথে ১বার সুরা ইয়াসিন" (বিঃদ্রঃএই ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়টি সর্বসিদ্ধ নয়)

তবে হাদীস শরীফে স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য দুটি খাবারের কথা উল্লেখ আছে 
"আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা:) এর সংসারে পাঠাতে চাচ্ছিলেন বিধায় আমার দৈহিক পরিপুষ্টির জন্য চিকিৎসা করাতেন। কিন্তু তা কোন উপকারে আসলো না। অবশেষে আমি তাজা খেজুরের সাথে শসা মিশিয়ে খেলাম এবং উত্তমরূপে দৈহিক পরিপুষ্টি লাভ করলাম।" (আবূ দাউদ ৩৯০৩)

খেজুর খাওয়া সম্পর্কে আরো বর্নিত আছে
"আবদুল্লাহ ইবনু জা’ফর ইবনু আবূ তালিব হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তাজা খেজুর কাঁকুড়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে দেখেছি"। [বুখারী ৫৪৪৭, ৫৪৪৯]
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় সম্পর্কে এই হাদীস ব্যাতীত নির্দিষ্ট আর কোন উপায়ের কথা উল্লেখ নেই

খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন

মোটা বা স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা। আমাদের প্রতিদিনের খাওয়া খাবার থেকে যে পরিমাণ ক্যালোরি শরীরে জমা হয় সেগুলো প্রতিদিনের পরিশ্রমই ব্যয় হয়ে যায়। তাই মোটা হওয়ার জন্য প্রতিদিন এক্সটা ৫০০ - ৭০০ ক্যালোরি খেতে হবে। ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়ে এক্সটা ক্যালোরিযুক্ত খাবার খেতে প্রোটিনবেজ এবং নিউট্রিশিয়ানবেজ খাবার খাওয়া যেতে পারে। নিচে তালিকা অনুযায়ী খেতে পারেন।
প্রোটিন বেজ হিসেবে প্রতিদিন 
  • ১০০ গ্রাম ভেজানো ছোলা (কাঁচা)
  • ৫০-৭০ গ্রাম বাদাম
  • ১-২ কাপ রান্না করা ডাল
  • ২০০ গ্রাম মুরগির মাংস
  • ১ কাপ টক দই (মধু মিশ্রণ করা যেতে পারে)
  • ১০০-১৫০ গ্রাম খেজুর
  • ১০০ গ্রাম কিসমিস
  • ১০০ গ্রাম ভুট্টা
  • ১০০ গ্রাম সিমের বিচি
একই সাথে নিউট্রিশিয়ানবেজ হিসেবে প্রতিদিন
  • ১গ্লাস দুধ এবং
  • ১টি ডিম খেতে পারেন।
বিঃদ্রঃ হঠাৎ করে খাদ্যে পরিবর্তন আনা যাবে না প্রথমে অল্প পরিসরে খেতে হবে পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পরিমাণে বৃদ্ধি করতে হবে। হঠাৎ অতিরিক্ত খাবার খাওয়া মোটা না হওয়ার কারণ হতে পারে

নিয়মমাফিক ব্যায়াম

মোটা হওয়ার জন্য আরও একটি কার্যকরী উপায় হল নিয়মিত ব্যায়াম করা। কারণ প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যেহেতু পরিবর্তন আনব সেহেতু এক্সটা ৫০০-৭০০ ক্যালোরি খেতে হবে তাই সেই ক্যালোরি শরীরে একজাস্ট হওয়ার জন্য পুশ আপ, পুল আপ সহ এইধরনের কিছু ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে।মোটা না হওয়ার কারণ এর ভেতর আরো একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হলো আমরা ব্যায়াম করলেও তা নিয়মিত করি না।

প্রথম অবস্থায় ব্যায়াম করার কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যাথা হতে পারে তাই বলে ব্যায়াম করা বাদ দেয়া যাবে না প্রয়োজনে একদিন বাদ দিয়ে আবার পরের দিন থেকে শুরু করতে পারেন। এবং প্রথম অবস্থায় ৫ মিনিট ১০ মিনিট ব্যায়াম করবেন ধীরে ধীরে প্রয়োজন মত সময় বৃদ্ধি করতে হবে তাহলে সমস্যা হবে না।

মোটা না হওয়ার কারণ

এমন অনেক ব্যক্তি থাকতে পারে যারা ইসলামে মোটা হওয়ার উপায় সহ খাবার তালিকায় পরিবর্তন, এক্সটা ক্যালোরিযুক্ত খাবার খাওয়া ইত্যাদি সকল বিষয় অনুশীলন করার পরেও মোটা হয় না। অর্থাৎ স্বাস্থ্য সচেতন হওয়ার পরেও আরো মোটা না হওয়ার কারণ থাকতে পারে। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো
  • নিয়মিত ব্যায়াম না করা।
  • সকালবেলা না খাওয়া।
  • সকালে নামমাত্র হালকা নাস্তা করা।
  • পানি কম খাওয়া
  • অতিরিক্ত জ্যাংক ফুড খাওয়া
  • বেশি বেশি ভাজা-পোড়া খাওয়া।
  • বাইরের খাবার বেশি খাওয়া
  • রাত জাগা বা পরিমিত বিশ্রাম না নেওয়া
  • অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া
আর যদি এমন হয় যে এগুলোর মধ্যে কোন একটি অভ্যাস আপনার মধ্যে নেই তার পরেও আপনি মোটা হতে পারছেন না তাহলে হয়তো আপনার এমন কোন রোগ থাকতে পারে যার কারণে মোটা বা স্বাস্থ্যবান হতে পারছেন না। স্বাস্থ্যবান না হওয়ার পিছনে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ইনফেকশন সহ দীর্ঘমেয়াদি রোগ দায়ী থাকতে পারে সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে পারেন। ভুল করেও বন্ধুদের পরামর্শে জ্যাংকফুড খেতে জানেন না। কারণ এতে মোটা হওয়া যায় তবে স্বাস্থ্যকর নয়, শুধুমাত্র পেট বড় হয়ে যায় এ কারণেই মোটা দেখায়।

শেষ কথা

কথায় আছে,
শরীর দেহ রান, সবই আল্লাহর দান।
ইসলামে মোটা হওয়ার উপায়, মোটা না হওয়ার কারণসহ বদ অভ্যাস ডাক্তারের পরামর্শ সমস্ত কিছুর পরেও যদি আপনি মোটা না হতে পারেন তাহলে বেশি চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই। এতে তার বিপরীত হতে পারে আর আমার ব্যক্তিগতভাবে পাতলা মানুষরাই সুখে দিন কাটায়। এবং আমার দেখা অনেক মোটা মানুষ যারা এখন পাতলা হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। তাই খুব শীঘ্রই শেষ পাতা ওয়েবসাইটে পাতলা হওয়ার টিপস এন্ড টিপস নিয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করা হবে।
পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কোনো কমেন্ট করা হয় নি
কমেন্ট করতে ক্লিক করুন

শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।

comment url