লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়াম
লম্বা হওয়া বা উচ্চতা বৃদ্ধি অনেক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি
শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, বরং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির জন্যও
প্রয়োজনীয়। জেনেটিক ফ্যাক্টরের পাশাপাশি, সুষম খাবার, সঠিক ব্যায়াম এবং
পর্যাপ্ত বিশ্রাম উচ্চতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই আর্টিকেলে
আমরা লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় এবং লম্বা হওয়ার ব্যায়ামগুলো নিয়ে
আলোচনা করব।
লম্বা হওয়ার উপায়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে চাইলে বেশকিছু বিষয় সামনে চলে আসে।
লম্বা হওয়া বা খাটো হওয়া এটি একটি আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত হওয়ার আশা-পাশি এটির
সাথে জন্মগত কিছু বিষয় সম্পৃক্ততা রয়েছে। সেই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে
'লম্বা হওয়ার কার্যকারী উপায় এবং লম্বা হওয়ার ব্যায়াম' শিরোনামের আজকের
আর্টিকেলে।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
বংশগত কারণ
কিছু লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়ামের মাধ্যমে উচ্চতা
বাড়ানো সম্ভব। তবে উচ্চতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো
জেনেটিক (বংশগত), কারণ। আমাদের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ মা–বাবা বা তার
আগের প্রজন্ম থেকে পেয়ে থাকি। এখানে আমাদের করার কিছু থাকে না। বাকি ২০-৩০ শতাংশ
সঠিকভাবে জীবনযাপন, সুষম খাবার, সঠিক ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম ওপর
নির্ভর করে বাড়ানো সম্ভব। তবে আজকে দেখানো উপায় গুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে কার্যকরী
হলেও জেনিটিক কারণে কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সেটি কার্যকরী নাও হতে পারে।
সুষম খাদ্যাভ্যাস ও লম্বা হওয়া
সুষম খাদ্যাভ্যাস লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায়গুলোর অন্যতম প্রধান উপাদান। সুষম
খাদ্যাভ্যাস মানে হলো শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিক অনুপাতে
প্রতিদিনের খাবারে রাখা। অর্থাৎ কোন বেলায় কোন খাবার, কতটুকু খেতে হবে, তার
নিয়ম জেনে খেতে হবে। কোনো একটা খাদ্য উপাদান বেশি খেয়ে অন্য একটা বাদ দেওয়া এমন
করা যাবে না।
খাবারের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, এবং
আয়রন হাড়ের গঠনে সহায়তা করে। শিশুদের জন্য প্রোটিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ,
কারণ এটি নতুন কোষ তৈরিতে সহায়ক। ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায় এবং মজবুত
করে। এছাড়া, ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণ বাড়ায়, যা হাড়ের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা
শরীরের সঠিক বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত বিস্রাম এবং ঘুম অপরিহার্য।
বিশেষ করে শিশু এবং কিশোরদের ক্ষেত্রে, রাতে ঘুমানোর সময় শরীর থেকে বৃদ্ধি
হরমোন নিঃসৃত হয়। তাই তাদের জন্য ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুমানো অপরিহার্য। বড়দের
ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। ঘুমের সময় শরীর
নিজেকে পুনরুদ্ধার করে এবং শক্তি সঞ্চয় করে, যা দৈনন্দিন ক্রিয়াকলাপের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ।
একই সাথে আমরা দৈননিক জীবনে বিভিন্ন কঠোর পরিশ্রম করে থাকি। পরিশ্রমের পর
আমাদের শরীরে যেই ক্লান্তি আসে সে ক্লান্তি দূর করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রামের
খুবই প্রয়োজন। তাই লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় সমূহের মধ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
স্ট্রেচিং ব্যায়াম
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য স্ট্রেচিং বা প্রসারণমূলক ব্যায়াম খুবই কার্যকর। প্রায়ই
দেখা যায়, স্ট্রেচিং করার মাধ্যমে মেরুদণ্ডের অংশগুলো প্রসারিত হয়, যা উচ্চতা
বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে, হাত উঁচু করে ঝুলে থাকা, দড়িলাফ, জগিং
করা, বাস্কেটবল, ভলিবল,প্রভিতি লম্বা হওয়ার ব্যায়াম। এসব অভ্যাস একদিকে হাড়ের
বৃদ্ধি ঘটায়, অন্যদিকে এইচজিএইচ গ্রোথ বাড়িয়ে উচ্চতা বাড়াতে কাজ করে। এবং যোগ
ব্যায়াম শরীরকে আরও প্রসারিত করে এবং লম্বা হওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করে।
যোগব্যায়াম ও উচ্চতা বৃদ্ধি
যোগব্যায়াম লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়াম হিসেবে
অসাধারন কাজ করে। তাড়াসন বা পাম ট্রি পোজ এবং ভুজঙ্গাসন বা কবরা পোজ
শরীরকে টানটান করে, ফলে মেরুদণ্ড দীর্ঘায়িত হয়। এছাড়া, যোগব্যায়াম
শরীরে নমনীয়তা আনায় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে শরীরের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত
করে। তাই নিয়মিত লম্বা হওয়ার ব্যায়াম করার পাশাপাশি অবশ্যই
যোগব্যায়াম করা উচিৎ কারণ এটি লম্বা হওয়ার ব্যায়াম সমূহর অন্যতম
সাঁতার কাটা
লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় খুজছেন আর সাঁতার কাটবেন না এমন তো হবে না। কারণ
সাঁতার উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য অন্যতম কার্যকরী উপায়। সাঁতার কাটার সময় শরীরের
সবগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ একসঙ্গে সক্রিয় থাকে এবং টানটান অবস্থায় থাকে। এটি
শরীরের মাংসপেশি প্রসারিত করে এবং মেরুদণ্ডকে সঠিকভাবে দীর্ঘায়িত করে, যা
লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায়।
সাইকেল চালানো
সাইকেল চালানো উচ্চতা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। সাইকেল চালানোর সময় পা
প্রসারিত হয় এবং পেশিগুলো টানটান হয়। ছোট বয়সে নিয়মিত সাইকেল চালালে পায়ের
হাড় বৃদ্ধি পায় এবং উচ্চতা বাড়তে সহায়ক হতে পারে। নিয়মিত
সাইকেল চালালে লম্বা হওয়ার ব্যায়াম করার দিক থেকে আরও একধাপ এগিয়ে
থাকবেন।
পরিমিত ডায়েট ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
শরীরের সঠিক বিকাশে পরিমিত ডায়েট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অতিরিক্ত শর্করা শরীরের
ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত করে। তাই খাদ্য তালিকায়
শর্করা কমিয়ে প্রোটিন, ফাইবার এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট অন্তর্ভুক্ত করা
উচিত।
একই সাথে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করলে শরীরের শক্তি ধরে রাখা এবং সঠিক
বিকাশ নিশ্চিত হয়। পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে
এবং কোষগুলোর স্বাস্থ্য বজায় রাখে। শরীরের কোষগুলো ঠিকভাবে কাজ করার জন্য পানি
প্রয়োজন। লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপাইয়ের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বগূর্ণ
বিষয়।
মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। মানসিক চাপ বৃদ্ধির হরমোন
নিঃসরণে প্রভাব ফেলে এবং শরীরের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করে। মানসিক চাপ উচ্চতা
বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করার পাশাপাশি শরীরে আরো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সমস্যার সৃষ্টি
করে। একই সাথে অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে খাদ্যে থাকা উপাদান সমূহ তার
কার্যকারিতা হারায়। তাই প্রতিদিন নিজেকে রিল্যাক্স করার জন্য কিছু সময় রাখা
এবং ধ্যান, যোগব্যায়াম করা উচিত।
শেষ পাতার মতামত
উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, এবং নিয়মিত ব্যায়াম
অপরিহার্য। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবার রাখা এবং নিয়মিত
স্ট্রেচিং, যোগব্যায়াম ও সাঁতার কাটা উচ্চতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। উচ্চতা শুধু
বাহ্যিক সৌন্দর্যের ব্যাপার নয়; এটি ব্যক্তির আত্মবিশ্বাস এবং শারীরিক
সুস্থতাও নির্ভর করে।
উপরোক্ত আলোচনায় লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়াম সমূহ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যকরী হলেও সেটি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই লম্বা
হওয়ার জন্য অর্থাৎ নিজের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য লম্বা হওয়ার কার্যকরী উপায় ও
লম্বা হওয়ার ব্যায়ামসমূহ দীর্ঘদিন যাবত নিয়মিত মেনে চলতে হবে তাহলে আশা
করি কার্যকরী ফলাফল পাবেন।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url