খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খেজুরের গুড় আমাদের ঐতিহ্যবাহী একটি মিষ্টি খাবার যা শীতকালে খুবই জনপ্রিয়। তবে
বাজারে নকল খেজুরের গুড়ের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় খাটি গুড় চিনতে বেশ অসুবিধা
হয়। খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় সম্পর্কে জানা থাকলে সহজেই নকল থেকে আসল
আলাদা করা সম্ভব। এই আর্টিকেলে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় নিয়ে বিস্তারিত
আলোচনা করা হয়েছে, যা আপনার জন্য সহায়ক হতে পারে।
গ্রামে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয় প্রায় প্রতিটি
বাড়িতেই এই উৎসব মাতিয়ে তুলে গ্রামের পরিবেশকে। এই পিঠা তৈরিতে চিনির পরিবর্তে
খেজুরের গুড় ব্যবহারে পিঠার স্বাদ বাড়িয়ে তুলে কয়েকগুণ। গন্ধে রাঙিয়ে যাই
পুরো বাড়ি কিন্তু বাজারে নকল খেজুরের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাই, আসল স্বাদ পেতে
খাঁটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানাটা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে
কয়েকটি উপায় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যে উপায় গুলো অবলম্বন করে আপনি নিজেই
খাঁটি খেজুরের গুড় চিহ্নিত করে ক্রয় করতে পারবেন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ
- গুড়ের রঙ দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- ঘ্রাণ থেকে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- স্বাদ পরীক্ষা করে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- খাটি গুড় কখন এবং কোথায় পাওয়া যায়
- গুড়ের ঘনত্ব দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- ফেনা দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- গুড়ের দৃঢ়তা দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- দ্রবণ তৈরির মাধ্যমে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- টেক্সচার দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
- শেষ কথা
গুড়ের রঙ দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খাটি খেজুরের গুড়ের রঙ সাধারণত হয় গাঢ় বাদামি থেকে হালকা সোনালি। এটি নির্ভর
করে খেজুরের রসের মান এবং রান্না বা তৈরির পদ্ধতির উপর। তবে বাজারের নকল গুড়
সাধারণত অতিরিক্ত কেমিক্যাল মিশিয়ে চকচকে সোনালি বা লালচে রঙে পরিণত করা হয়।
তাই গুড়ের রঙ দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই খাটি
এবং কেমিক্যাল যুক্ত খেজুরের গুড় আলাদা করতে পারবেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে
কেমিক্যাল যুক্ত খেজুরের গুড়ও খাটি খেজুরের গুড়ের মতো কালার হতে পারে। এ
ক্ষেত্রে ঘ্রাণ থেকে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় অবলম্বন করতে পারেন।
ঘ্রাণ থেকে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খাটি খেজুরের গুড়ের বিশেষ একটি প্রাকৃতিক ঘ্রাণ রয়েছে, যা একবার নাকে গেলে
সহজেই বোঝা যায় এটি খাটি। নকল গুড়ের ক্ষেত্রে এই ঘ্রাণ তেমন পাওয়া যায় না,
কারণ কৃত্রিম উপায়ে তৈরি গুড়ে খেজুরের প্রকৃত গন্ধ থাকে না। তাই ঘ্রাণ শুঁকে
খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় খুঁজে বের করতে পারেন। তবে এ জন্য অবশ্যই আপনাকে
প্রাকৃতিক খেজুরের গুড়ের ঘ্রাণটি চিনতে হবে। যদি আপনি প্রাকৃতিক খেজুরের
গুড়ের ঘ্রাণ না চিনে থাকেন তাহলে স্বাদ পরিক্ষা করে নিতে পারেন।
স্বাদ পরীক্ষা করে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
স্বাদ হলো খাটি খেজুরের গুড় চেনার সবচেয়ে সহজ উপায়। খাটি গুড়ে স্বাদে একটু
মিষ্টি হবে, তবে তা অতিরিক্ত নয়। নকল গুড়ের স্বাদ বেশি মিষ্টি বা তিক্ত হতে
পারে, কারণ এতে বিভিন্ন রাসায়নিক/কেমিক্যাল মেশানো থাকে। সঠিক স্বাদের মাধ্যমে
খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানা থাকলে খুব সহজেই আসল ও নকল গুড় আলাদা করা
যায়। এর পরেও যদি আপনি খাটি খেজুরের গুড় চিনতে না পারেন তাহলে পরবর্তি
পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে পারেন।
খাটি গুড় কখন এবং কোথায় পাওয়া যায়
খেজুরের গুড় সাধারণত শীতকালে সংগ্রহ করা হয়, তাই বাজারে এবং অনলাইনে শীতকালে
খাটি খেজুরের গুড় সহজেই পাওয়া যায়। যদি গ্রীষ্ম বা বর্ষার সময় বাজারে
খেজুরের গুড় দেখা যায়, তবে তা নকল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সিজনাল ফ্যাক্টর
বুঝে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানা থাকলে ভেজাল থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ
হয়।
শীতকালে আপনার কাছাকাছি যে কোন বাজারে গিয়ে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করা খাঁটি
খেজুরের গুড় চেনার উপায়গুলো অবলম্বন করে যদি আপনার কাছে খাঁটি মনে হয় তাহলে
ক্রয় করতে পারবেন। একই সাথে
অনলাইনে খাঁটি খেজুরের গুড় ক্রয় করতে চাইলে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।
গুড়ের ঘনত্ব দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খাটি খেজুরের গুড় সাধারণত ঘন ও স্যাঁতসেঁতে হয়, কারণ এতে খেজুরের প্রকৃত রস
থাকে। নকল গুড়ের ঘনত্ব সাধারণত কম বা খুব বেশি শক্ত হয়, যা এটি খাটি গুড়
নয় বলে ইঙ্গিত দেয়। গুড়ের ঘনত্ব দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় জানা
থাকলে আপনি সহজেই আসল গুড় নির্বাচন করতে পারবেন। গুড় খাঁটি হলে হালকা চাপ
দিলেই ভেঙে যাওয়ার কথা। আলতো করে আঙুলের চাপ দিলেই যদি গুড় ভেঙে যায়,
তাহলে বুঝবেন সেই গুড় খাঁটি। আর গুড় যদি শক্ত হয়ে থাকে, তাহলে বুঝে নেবেন
সেটি খাঁটি পাটালি গুঁড় নয়, বরং ভেজাল মিশ্রিত।
ফেনা দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খেজুরের গুড় বাসায় নিয়ে আসার পর সেই গুড় দিয়ে কোন কিছু রান্নার সময় যদি সেই
গুড় খাটি হয় তাহলে প্রাকৃতিকভাবে ফেনা তৈরি হবে, অর্থাৎ গুড়ে এক প্রকার আবরণ
সৃষ্টি করে। তবে নকল গুড়ে সাধারণত এই ফেনা বা আবরণ থাকে না। তাই গুড়ের ফেনা
দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় সম্পর্কে জানতে পারলে নকল গুড় এড়ানো
সম্ভব। যদিও এই পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে বাসায় আনার পর বোঝা যায় তবে এটি খুবই
কার্যকরি উপায়।
গুড়ের দৃঢ়তা দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
গুড়ের দৃঢ়তা পরীক্ষা করেও খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায় সম্পর্কে ধারণা লাভ
করা যায়। বা খাটি খেজুরের গুড় চেনা যায়। খেজুরের গুড় কিনে বাসায় এনে
রেখে দিলে কিছু কিছু গুড় খুব শীঘ্রই নরম হয়ে যায় আবার কিছু কিছু গুড় বেশ
সময় ধরে শক্ত থাকে। এখানে যেই গুড়গুলো অল্প সময়ের মধ্যে নরম হয়ে যায়
সেগুলো খাঁটি খেজুরের গুড়। কারণ, খাটি খেজুরের গুড় অল্প সময়ে নরম ও
ভঙ্গুর হয়। নকল গুড়ের ক্ষেত্রে এটি অনেক সময় বেশ শক্ত ও কঠিন থাকে।
দ্রবণ তৈরির মাধ্যমে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খাটি খেজুরের গুড় চেনার আরো একটি কার্যকরি উপায় হলো দ্রবণ তৈরির পরীক্ষা। এটি
খুবই সহজ ও কার্যকরি উপায়। একটি ছোট টুকরো গুড় গরম পানিতে মিশিয়ে দেখুন। খাটি
খেজুরের গুড় সহজেই মিশে যাবে এবং তাতে কোন অবশিষ্টাংশ থাকবে না। নকল গুড়ে
অনেক সময় অতিরিক্ত কেমিক্যাল বা চিনি থাকে যা দ্রবণ তৈরি করার সময় স্পষ্টভাবে
বোঝা যায়।
টেক্সচার দেখে খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
খাটি খেজুরের গুড়ের টেক্সচার কিছুটা অমসৃণ এবং গাঢ় কালারের হয়ে থাকে। একই সাথে
তাতে খেজুরের প্রকৃত গুণাগুণ ফুটে ওঠে। নকল গুড় সাধারণত মসৃণ, লাইট কালার এবং
চকচকে হয়। তাই গুড়ের টেক্সচার পর্যবেক্ষণ করেও খাটি খেজুরের গুড় চেনার উপায়
জানা সম্ভব।
বর্তমানে কিছু কিছু গুড়ে চিনির মিশ্রণ করা হয়। চিনি চিনি মিশ্রিত গুড়
সূর্যের আলোর সামনে নিয়ে গেলে আয়নার মতো চকচক করবে অপরদিকে খাঁটি গুড়ে সেটি
হবে না। অর্থাৎ চকচক করলেই যে সোনা হয় না তার প্রমাণ এখান থেকেও পাওয়া
যায়।
শেষ কথা
আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ হওয়ার প্রধান কারণ হলো ভেজাল খাদ্য গ্রহণ করা। খেজুরের গুড়ের পাশাপাশি অন্যান্য সকল প্রকার খাবার নির্বাচন করার আগে সেগুলোতে ভেজাল মিশ্রিত আছে কিনা তা জানা আমাদের সকলের দায়িত্ব। নিজের সচেতন হয়ে অপরকে সচেতন করি।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url