গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় ।। গাছ লাগানোর গুরুত্ব
গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সময়ের একটি বিশাল ভূমিকা রয়েছে। কারণ সঠিক সময়ে গাছ লাগালে এর বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো কেন গাছ লাগানো উচিৎ, কোন গাছ পরিবেশের জন্য উপকারী, গাছ লাগানোর উপযুক্ত পদ্ধতি, এবং কোন মাটিতে কোন গাছ উপযোগী ইত্যাদি বিষয়ে।
আমাদের পরিবেশে গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছ শুধু আমাদের চারপাশকে সবুজ করে তোলে না, বরং বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে আমাদেরকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ করে। গাছ লাগানো আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়া উচিত। হাদীস শরীফেও গাছ লাগানোর বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তাই, আমাদের সকলের প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময়ে গাছ লাগানো উচিত।
পেজ সূচিপত্রঃ
কেন গাছ লাগানো উচিৎ
গাছ লাগানো শুধু একটি সামাজিক দায়িত্বই নয় বরং এটি আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদের
সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে বাতাসে কার্বন
ডাই-অক্সাইড বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা গাছের মাধ্যমেই কমানো সম্ভব। গাছগুলো অক্সিজেন
সরবরাহের পাশাপাশি বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে এবং বাতাসকে
বিশুদ্ধ রাখে।
এছাড়া, গাছ মাটি ক্ষয় রোধে সহায়ক এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর রক্ষা করতে
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়ে গাছ রোপণ
করলে, তা দ্রুত বেড়ে ওঠে এবং পরিবেশকে দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও, গাছ
প্রাণীকুলের আবাসস্থল সরবরাহ করে, যেখান থেকে তারা খাদ্য সংগ্রহ করে। তাই, আমাদের
উচিত গাছ লাগানোকে জীবনের একটি অংশে পরিণত করা এবং এর উপযুক্ত সময় ও পদ্ধতি
অনুসরণ করা।
গাছ লাগানোর গুরুত্ব নিয়ে হাদিস
ইসলামে গাছ লাগানোর গুরুত্ব অনেক বেশি, এবং হাদিসে এর বিশেষ মর্যাদা উল্লেখ করা
হয়েছে। গাছ লাগানোর মাধ্যমে মানুষ পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, সমাজের প্রতি
দায়িত্ব পালন এবং সওয়াব অর্জন করতে পারে। এখানে কিছু হাদিস দেওয়া হলো যা গাছ
লাগানোর গুরুত্ব এবং এর সওয়াবের প্রতি ইঙ্গিত করে:
- হাদিস-১ "যে ব্যক্তি মাটিতে গাছ রোপণ করে এবং সে গাছ থেকে খাবার, ফল, বা অন্য কিছু কেউ গ্রহণ করে, তাহলে সে ব্যক্তির জন্য তা সাদাকা হিসেবে গণ্য হয়।" [বুখারি ২৩২০]
এই হাদিসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গাছ রোপণ করা একটি সদকাহ (দান) হিসেবে গণ্য হয়,
এবং গাছ থেকে অন্যরা যা উপকার পাবে, তার সওয়াব রোপণকারীকে দেওয়া হবে।
- হাদিস-২ "যদি কিয়ামত সংঘটিত হয় এবং কোনো ব্যক্তি তার হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তবে সে যেন তা রোপণ করে, যদি সে তা করতে সক্ষম হয়।" (সহীহ বুখারি)
এই হাদিসে বলা হয়েছে যে, কিয়ামতেও যদি মানুষের হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তবুও
তাকে তা রোপণ করতে বলা হয়েছে। এটা গাছ লাগানোর গুরুত্ব এবং এর মাধ্যমে মানুষের
পরিবেশের প্রতি যত্নের প্রতীক।
- হাদিস-৩ "ইসলামে মুমিনের কাজ তিনটি এমন, যা তার মৃত্যুর পরও তাকে সওয়াব দিয়ে যায়: সদকা জারিয়া (স্থায়ী দান), বিজ্ঞান যা মানুষ উপকার পায়, এবং এমন একটি সৎ সন্তান যে তার জন্য দোয়া করে।" [মুসলিম ৪১১৫-(১৪/১৬৩১)]
{গাছ লাগানোও এক ধরনের সদকা জারিয়া (স্থায়ী দান) হিসেবে গণ্য হয়, কারণ গাছ
মৃত্যুর পরও মানুষের উপকারে আসে। গাছের ফল খাওয়া, ছায়া পাওয়া বা অন্যান্য
উপকারিতা যেমন পানি শোধন করা, এগুলো সব সওয়াবের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়}
এই হাদিসগুলো প্রমাণ করে যে, ইসলাম গাছ লাগানোকে একটি মহৎ কাজ হিসেবে গণ্য করে
এবং তার মাধ্যমে সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়। এজন্য মুসলমানদের জন্য গাছ লাগানো
এবং পরিবেশ রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
কোন গাছ পরিবেশের জন্য বেশি উপকারী
পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট প্রজাতির গাছ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
যেমন, নিম গাছ তার অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত এবং এটি বাতাস থেকে
ক্ষতিকর জীবাণু এবং ব্যাকটেরিয়া শোষণ করে বাতাসকে পরিশুদ্ধ রাখে। এছাড়াও,
অশ্বত্থ এবং বট গাছ প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ করে। পাইন গাছও দূষণ
নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং অল্প পানিতে টিকে থাকে, যা শুষ্ক এলাকায় উপযোগী। তুলসী
গাছ তার ঔষধি গুণাবলী এবং বাতাস পরিশুদ্ধ করার জন্য সুপরিচিত।
গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়ে এই ধরনের গাছ রোপণ করলে পরিবেশের জন্য ইতিবাচক
পরিবর্তন আসে। এসব গাছ শুধু পরিবেশকে ভালো রাখে না, বরং আমাদের মানসিক সুস্থতার
জন্যও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুতরাং, পরিবেশকে টেকসই করার জন্য এই ধরনের উপকারী
গাছ বেশি করে লাগানো উচিত।
কোন মাটিতে কোন গাছ উপযোগী
মাটির ধরন গাছের বৃদ্ধির উপর একটি বড় প্রভাব ফেলে। যেমন, দোআঁশ মাটি সাধারণত সব
ধরনের গাছের জন্য উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়, কারণ এতে জল এবং বাতাস সহজে প্রবাহিত
হয়। এদিকে লাল মাটিতে সাধারণত আম গাছ ভালো জন্মায়, কারণ এই মাটি পানি শোষণ করতে
এবং তা ধরে রাখতে সক্ষম। বেলে মাটিতে সাধারণত শিমুল এবং বাবলা গাছ ভালোভাবে বেড়ে
ওঠে, কারণ এই মাটি দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং এতে জল জমে থাকে না। তাই, গাছ লাগানোর
উপযুক্ত সময়ের পাশাপাশি মাটির ধরনও বিবেচনা করা উচিত। এভাবে সঠিক মাটিতে গাছ
লাগানো হলে গাছের বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্য অনেক ভালো থাকে এবং পরিবেশে ইতিবাচক প্রভাব
ফেলে।
গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় ও ঋতু নির্বাচন
গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সময়ের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্ষাকাল গাছ
লাগানোর উপযুক্ত সময় হিসাবে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। এই সময়ে বৃষ্টি এবং
আর্দ্রতার উপস্থিতি থাকার কারণে মাটি স্বাভাবিকভাবেই আর্দ্র থাকে। বর্ষাকালে গাছ
লাগানোর ফলে মাটির মধ্যে সহজেই গাছের শিকড় বসতে পারে এবং নতুন চারা দ্রুত বাড়ে।
শীতকালেও গাছ লাগানো সম্ভব, তবে তখন মাটি শুকিয়ে যায় বলে গাছের বৃদ্ধি ধীর হয়ে
যেতে পারে।
গ্রীষ্মকালে গাছ লাগানো কিছুটা কঠিন, কারণ এই সময়ে পানির প্রয়োজন বেড়ে যায়
এবং গাছের জন্য যত্নের প্রয়োজন হয়। সুতরাং, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হিসাবে
বর্ষাকাল সবচেয়ে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়, কারণ এটি গাছের জন্য প্রাকৃতিকভাবে
অনুকূল পরিবেশ সরবরাহ করে।
শিশিরের সময়কাল গাছ লাগানোর উপযোগীতা
শীতের প্রাক্কালে শিশিরের উপস্থিতি গাছ লাগানোর জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
এই সময়ে মাটিতে প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা থাকে, যা গাছের জন্য উপযুক্ত। এই সময়ে
নতুন গাছের শিকড় দ্রুত মাটিতে প্রবেশ করে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ
করতে পারে। এছাড়া, শিশিরের কারণে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়, যা গাছের
বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই, গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় হিসাবে শিশিরের
সময়কাল বিবেচনা করা যায়। এতে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয় এবং এটি তাড়াতাড়ি
স্বাভাবিক বৃদ্ধির পথে অগ্রসর হয়।
শহর ও গ্রামাঞ্চলে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে গাছ লাগানোর পরিবেশ অনেক বেশি অনুকূল থাকে। শহরে বায়ু
দূষণ বেশি থাকার কারণে এখানে গাছ রোপণের প্রয়োজনও বেশি। শহরের মাটির আর্দ্রতা কম
থাকায় বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়। অন্যদিকে, গ্রামাঞ্চলে মাটি এবং বায়ু
স্বাভাবিকভাবে আরও বিশুদ্ধ ও আর্দ্র থাকে। সেখানেও বর্ষাকালে গাছ লাগানো
সর্বোত্তম, তবে বছরের অন্য সময়গুলোতেও গাছ লাগানো যেতে পারে। এভাবে শহর ও
গ্রামাঞ্চলে গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়ের সঠিক প্রয়োগে আমরা পরিবেশের ভারসাম্য
বজায় রাখতে পারি।
গাছ লাগানোর পদ্ধতি
গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে, গাছ
লাগানোর জন্য একটি ভালো মাটি নির্বাচন করা উচিত, যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি
ও আর্দ্রতা আছে। মাটি যদি শুষ্ক হয়, তবে সেখানে গাছ লাগানোর আগে মাটিকে ভালোভাবে
আর্দ্র করতে হবে। তারপর, গাছের চারা লাগানোর সময় গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণত বর্ষাকালে গাছ লাগানো সবচেয়ে উপকারী,
কারণ এই সময়ে মাটিতে আর্দ্রতা থাকে এবং গাছ দ্রুত বাড়ে। চারা লাগানোর পর
নিয়মিত পানি সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় সার প্রয়োগের বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত।
এছাড়া, গাছের চারপাশে নির্দিষ্ট দূরত্ব রেখে গাছ লাগানো উচিত যাতে প্রতিটি গাছ
পর্যাপ্ত জায়গা ও আলো পায়। এভাবে সঠিক পদ্ধতিতে গাছ লাগালে গাছটি দ্রুত এবং
সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।
শেষ পাতার কমেন্ট পলিসি মেনে কমেন্ট করুন।
comment url